You are currently viewing আকাশ নীল দেখায় কেন ??

নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে সবারই খুব ভালো লাগে। খোলা আকাশটা কেমন করে যেন মন ভালো করে দেয়। আচ্ছা, এই যে আমরা নীল আকাশ দেখি, নীল আকাশের কথা বলি- কখনো কী ভেবে দেখেছ, আকাশটা কেন নীল রঙের হলো? কেন অন্য কোনো রঙের হলো না?

নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে সবারই খুব ভালো লাগে। খোলা আকাশটা কেমন করে যেন মন ভালো করে দেয়। আচ্ছা, এই যে আমরা নীল আকাশ দেখি, নীল আকাশের কথা বলি- কখনো কী ভেবে দেখেছি, আকাশটা কেন নীল রঙের হলো? কেন অন্য কোনো রঙের হলো না?

প্রশ্নটা যেমন মজার, এর উত্তরটাও কিন্তু তেমনই মজার। সেই উত্তরটা জানতে হলে আগে জানতে হবে আকাশ কী।

আকাশ আসলে আমাদের বায়ুমণ্ডল। বিভিন্ন ধরনের গ্যাস ও জলীয় বাষ্প দিয়ে তৈরি এটি। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এটা চারপাশ থেকে পৃথিবীকে ঘিরে আছে। পৃথিবী ছেড়ে যত উপরে যাবে, বায়ুমণ্ডল ততই হালকা হতে থাকবে এবং আস্তে আস্তে এটা আর থাকবে না। এজন্য মহাশূন্যে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই।

পৃথিবীর চারপাশে বায়ুমন্ডলে ভাসমান ছোট ছোট ধূলিকণা রয়েছে। সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসার সময় ঐ কণাগুলি দ্বারা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। এবং নীল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম বলে Rayleigh scattering এর সূত্র অনুযায়ী তা সবচেয়ে বেশি বিচ্ছুরিত হয়। যার কারনে দিনের আলোতে আকাশকে নীল দেখায়। আর রাতের বেলা সূর্যরশ্মির অনুপস্থিতির কারনে বিচ্ছুরন ঘটেনা এবংআকাশ কালো দেখায়

পছন্দ হলোনা? আরো ব্যাখ্যা দরকার? ঠিক আছে।

প্রথমে সহজ একটা প্রশ্ন করি,আচ্ছা সূর্যের আলোর রঙ কি?
সাদা! হ্যাঁ বহু যুগ পর্যন্ত সবার এই ধারনাই ছিলো। স্যার আইজাক নিউটন পরীক্ষা করে দেখান যে সূর্য থেকে পাওয়া সাদা আলো আসলে সাতটি আলাদা রঙের সমন্বয়। প্রতিটি আলাদা রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মান আলাদা। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি আর বেগুনী রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম।

১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে জন টিন্ড্যাল একটি পরীক্ষা করেন। একটি পাত্রে জলের মধ্যে দুধ এবং সাবান মিশিয়ে দেন। এবার পাত্রের একপাশে আলো ফেললে দেখা যায় অপর পাশ থেকে আলোর নীলাভ আলোক রশ্মিগুলি বেশি বিচ্ছুরিত হচ্ছে যা টিন্ড্যাল এফেক্ট (Tyndall Effect) নামে পরিচিত।

দিনের বেলা আকাশ নীল কেন why sky is blue

পরবর্তী কালে বিজ্ঞানী রেইলি আলোর বিচ্ছুরণের একটি তত্ত্ব আবিস্কার করেন। সেই অনুযায়ী যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম তা বেশি বিচ্ছুরিত হবে। তাঁর হিসেব অনুযায়ী – একটি আলোক তরঙ্গের বিচ্ছুরণের পরিমাণ হয় সেই আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের চতুর্ঘাত এর ব্যাস্তনুপাতিক।  নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য লাল আলোর থেকে অনেক কম । অর্থাৎ, অঙ্কের ভাষায় –

I α 1/λ4 (I = বিচ্ছুরণের পরিমাণ, λ = তরঙ্গদৈর্ঘ্য )

আগে মনে করা হত বাস্প, ধূলিকণা সব কিছুই আকাশের নীল রঙ এর জন্যে দায়ী। কিন্তু পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেন যে, যদি বাস্পকণাও বিচ্ছুরণের কারন হত, তাহলে স্থানভেদে আদ্রতা, কুয়াশা ইত্যাদির ভিন্নতার কারণে এক এক স্থানে আকাশের রঙ এক এক রকম দেখাতো! তাই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আকাশের বিভিন্ন স্তরে অবস্থিত অক্সিজেন আর নাইট্রোজেনের অনুগুলোই এই বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আকাশকে নীল দেখানোর পক্ষে যথেষ্ট। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে আইনস্টাইনের অনু থেকে আলোর বিচ্ছুরণের তত্ত্ব প্রকাশ করলে এই ধারণা আরও জোরদার হয়।

তবে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে, বেগুনী রঙের আলোকরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য তো নীল আলোর থেকেও কম তাহলে আকাশ কেন বেগুনী দেখায় না?

প্রথমত, বায়ুমন্ডলে বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণ সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের জন্য সমান নয়। একই সাথে বায়ুমন্ডল পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে এত উঁচুতে অবস্থিত যে সেখান থেকে বিচ্ছুরিত আলো পৌঁছাতে পৌঁছাতে বায়ুমণ্ডলে ঐ বেগুনী আলোর অনেকটা শোষিত হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, মানুষের রেটিনায় তিন ধরনের কোণ কোষ (cone cells) থাকে। অন্যান্য রঙের চেয়ে এরা লাল, নীল এবং সবুজ আলোতে সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীলতা দেখায়। এই কোণগুলোর বিভিন্ন অনুপাতের সংবেদনশীলতার সমন্বয়েই আমরা বিভিন্ন রঙ দেখে থাকি। আমাদের চোখের কোষগুলি ‘অতিবেগুনী’ আলোক-সংবেদনশীল না। এ জন্য মানুষের কাছে আকাশকে গাঢ় বেগুনী বলে মনে হয় না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,  ভূপৃষ্ঠের নীচের দিকে নীল আলো আরও বিচ্ছুরিত হতে থাকার ফলে দিগন্তের কাছাকাছি আকাশের রঙ ক্রমশই ফ্যাকাশে হতে থাকে ।

টেন মিনিট স্কুলের এই ভিডিও টি দেখতে পারেন তাতে আপনার আরো সহজ হবে আশা করি ।

Leave a Reply