নাম : আরণ্যক
লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
আরণ্যক বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় (১৮৯৪-১৯৫০) রচিত চতুর্থ উপন্যাস। ১৯৩৯ সালে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিহারে তার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে উপন্যাসটি রচনা করেন। আরণ্যক উপন্যাসটির রচনাকাল ১৯৩৭-৩৯ খ্রিষ্টাব্দ। “কাত্যায়ণী বুক স্টল” থেকে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।বই হিসাবে প্রকাশের আগে প্রবাসী মাসিক পত্রিকায় কার্তিক ১৯৩৮ থেকে ফাল্গুন ১৯৩৯ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়। বিভূতিভূষণ এই উপন্যাসটি অকালে-লোকান্তরিতা তার প্রথমা স্ত্রী গৌরী দেবীকে উৎসর্গ করেন।
আরণ্যক এক বনভূমির গল্প। পূর্নিয়া জেলার এক বিস্তৃত অরণ্যের আশ্রয়ে বেঁচে যাওয়া এক যাপিত জীবনগাথা এই গল্পের মূল উপজীব্য।বলা হয় জীবন এক বহমান শাখা-প্রশাখা যুক্ত নদী যা ক্ষনে ক্ষনে আপন মনে তার দিক পরিবর্তন করে তার অন্তিম গন্তব্যে পৌছায়।
এই বহমান প্রবাহিকায় তার সাথে দেখা হয় নানান মতের, ভিন্ন জাতের অথবা আলাদা কোনো অভিজ্ঞতার সাথে যার সহাচার্য জীবনকে এনে দেয় অন্যরকম এক পরিপূর্ণতা। বন্ধু অবিনাশের আকস্মিক প্রস্তাবে গল্পের কথক অনেক টা বাধ্য হয়েই এই গহীন অজানা অরণ্যে আসে ভাগ্যের উন্নতির আশায়।
কলকাতার মতো ব্যাস্ত নগরীর মাঝে বেড়ে উঠা প্রান অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে পড়ে জনমানব শূন্য এই অরণ্যে। গল্পপুরুষ অনেক বার ভেবেছিলেন চাকরী ছেড়ে নিজের কোলাহলময় জীবনে আবার ফিরে আসবেন।
এখানে আমার খুব প্রিয় একটি মুভির কথা কেনো যেনো বার বার মনে পড়ে যায় । প্রিয় মুভির প্রিয় চরিত্রটির সাথে গল্পকথকের একটিই পার্থক্য – একজন থাকেন জেলের চার দেয়ালের মাঝে আর অন্যজন সল্প জনমানবের এক অরণ্যে।
মুভিতে রেড বলেছিলো-These walls are kind of funny. First you hate ’em, then you get used to ’em. Enough time passes, gets so you depend on them.উপন্যাসের কথক তার এই জীবনের পারম্ভিকতায় বারংবার ফিরে আসতে চেয়েছিলেন তার আপণ ঠিকানায়, হতাশার নিমজ্জিত তার প্রাণ শ্বাস পালিয়ে যেতে চেয়েছে বার বার। কিন্তু সময়ের সাথে এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে পড়েন এই বনভূমির সাথে।
ধীরে ধীরে এই অরণ্যে ঢাকা জনপদ হয়ে উঠে তার পরম বন্ধু।অরণ্যের পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে তার নীড়ে আশ্রিত করেন তিনি। গুচ্ছ গুচ্ছ অংশে তারা ডালপালা দিয়ে তার ক্ষতবিক্ষত স্মৃতিগুলোর মাঝে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে থাকে সময়ের সাথে।
যে জীবন থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন সেই জনমানবহীন অরণ্যের মায়ায় তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। কিন্ত নদীর পথের মতো যে জীবন সেখানে স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। সময়ের সাথে তাকেও স্রোতের মতো বয়ে যেতে হয় নতুন এক ঠিকানায়।
তবুও কোনো এক বাদাম গাছের নীচে জীবনের সেই অনুভূতি গুলো এখনো তাকে হাসায় অথবা কাঁদায়। কলকাতার ব্যাস্তময় জীবন কে পিছনে ফেলে সে মিশে যেতে চায় সেই পুড়ে যাওয়া জীবনগুলোর মাঝে – তার আপণ ঠিকানায়।
তার আরণ্যকে! কিন্তু সেটা কি আদ্যো সম্ভব?? হয়তো না!
বইটি পড়েই প্রথম আক্ষেপ হলো কেনো বইটি এখনই পড়লাম। আমি মাঝে মাঝে বলি কিছু বই পড়তে আয়োজন করে। যেখানে আকাশে বিশাল বড় এক চাঁদ থাকবে, চাঁদের আলোয় আমার ঘর আংশিক নিমজ্জিত থাকবে।
বারান্দার ফুলের মো মো গন্ধে বইটি হাতে নিয়ে আমি ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিবো। জানালা দিয়ে তাকালে রাস্তার হলুদ আলোর সাথে আকাশের রং মিশে এক মনহরণ পরিবেশে বইটি হাতে নিজের স্মৃতিগুলোকে খুজে বেড়াবো।
সত্যিই এই বইয়ের জন্য দরকার এক অসাধারণ পরিবেশের যেখানে আপনার সাথী কেবল একজনই- আর সে হলো আরণ্যক।।
এইসব বইয়ের রেটিং হয় না। এতো বড় ধৃষ্টতা করার মতো পাঠক এখনো হয়ে উঠিনি
লিখেছেন – রাকিব আহমেদ