You are currently viewing রান্নাঘরের টুকিটাকি

রান্না করার পর খেতে কয়েক মিনিট লাগলেও খাওয়ার আগে ও পরে গুছিয়ে রাখার কাজটা কিন্তু ভীষণ কঠিন। বাড়ির আর সব জায়গা গোছানোর চেয়ে রান্নাঘর গোছানো একটু কঠিনই বটে। তাই জেনে নিন রান্না ঘরের কিছু কাজ সহজ করার উপায়-

ডাল ওথলে পড়া রোধে

রান্নার একটা বাজে বৈশিষ্ট্য আছে। যখনই চুলার সামনে থেকে সরে যাওয়া হয় তখনই বলক উঠে। তবে ডাল চুলায় দিয়ে এই চিন্তা উতরানো উপায় আছে। আসুন জেনে নেই, কিভাবে। ডাল রান্নার সময় একটু তেল দিলে বলক এলেও ওথলে পড়ে না। এবং ডাল তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়।

পেঁয়াজ কুটলে কটু গন্ধ হলে

 গন্ধ হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক। মনে হয় সারা দেহেই বুঝি গন্ধটা লেগে রয়েছে। গন্ধ কাটাবার জন্য তখন একটু সরষে তেল হাতে ঢেলে ডলে নেবেন। দেখবেন গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

তরকারিতে হলুদ বেশি হলে

তরকারিতে হলুদ বেশি হলে সত্যিই খেতে খুব খারাপ লাগে। গন্ধ লাগে শুধু ওই গন্ধটার জন্যই। এইরকম অবস্থায় একটি খুন্তি চুলায় পুড়িয়ে লাল করে ওই তরকারিতে ডুবিয়ে দেবেন। দেখবেন গন্ধ কেটে গেছে।

চুলায় আঁচ না উঠলে

কয়লার চুলায় অনেক সময় আঁচ উঠতে দেরি হয়। বা একেবারে তলায় থাকে। ওপরে উঠতে চায় না। একটু লবণ ছড়িয়ে দিয়ে দেখবেন, আশ্চর্য ফল পেয়ে গেছেন।

লবণ গলে গেলে

পাত্রে রাখা লবণ অনেক সময় গলে যায়, যার ফলে রান্নার লবণের পরিমাণ প্রায় সময়ই হেরফের হয়ে যায়। এ অসুবিধা দূর করতে এক টুকরো ব্লটিং পেপার কেটে পাত্রের তলায় রেখে তার ওপরে লবণ রেখে দেখুন। সমস্যা দূর হয়ে গেছে।

কাঁচা মরিচ সতেজ রাখতে

কাচা মরিচ সতেজ রাখতে কাঁচা মরিচের বোটা ছাড়িয়ে পলিথিনে বেঁধে ফ্রিজে রাখুন। অনেক দিন সতেজ থাকবে।

লেবু টাটকা রাখতে হলে

অনেক সংসারেই লেবু লাগে। একসাথে বেশ কয়েকটা কিনলে দাম একটু সস্তা হয় কিন্তু বাড়িতে এনে সবগুলো ব্যবহার করা যায় না। তার আগেই দু’একটা শুকিয়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে গেলে লেবু পানিতে রাখুন এবং রোজই সেই পানি পাল্টে দিন। এইভাবে লেবু অনেকদিন টাটকা রাখতে পারবেন।


আরো পড়ুন


আরো পড়ুন



ডিম টাটকা রাখার উপায়

ডিমকে টাটকা রাখতে হলে চুনের পানিতে অথবা লবণের পানিতে ডুবিয়ে নিন। দেখবেন অনেকদিন অবধি তাজা থাকবে। ডিম একটু ফেটে গেলে সেদ্ধ করার সময় পানিতে লবণ মিশিয়ে নিন। দেখবেন ডিম পানিতে বের হয়ে আসবে না।

মাংস টাটকা রাখার পদ্ধতি

যাদের ফ্রিজ নেই তাদের বাড়িতে যদি কোন দিন মাংস একটু বেশি আসে তবে নষ্ট হবার ভয়ে যে সবগুলো একবারে রান্না করে ফেলতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইচ্ছে হলে পরের দিন বা তার পরের দিনের জন্য কিছু রেখেও দিতে পারেন। তেমন কিছু করতে হবে না। শুধু একটা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে মাংস রেখে তার ওপর মাঠা তোলা দুধ এমনভাবে ঢেলে দেবেন যেন মাংস ওই দুধে ডুবে যায়। এভাবে ৪-৫ দিন অবধি মাংস বেশ টাটকা থাকবে এবং ব্যবহারও করতে পারবেন। তাছাড়া আর একটা পদ্ধতি রয়েছে যেটা রোদেশুকিয়ে করা হয়। পদ্ধতিটি শুকটি মাছ তৈরির পদ্ধতির মতো। এটাকে মাংসের এজিং প্রসেস বলা হয়। এভাবেও এটা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায় তবে এর স্বাদ কিছুটা ভিন্ন হবে।

পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বলা রোধ করতে

এত বছর রান্নাবান্না করেও পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বলে, কান্না আসে?তাহলে এই টিপস আপনার জন্য। পেঁয়াজ কাটার আগে পেঁয়াজগুলো কিছুক্ষণ ভিজেগারে ভিজিয়ে রাখুন তাহলে আর চোখ জ্বলবে না, কান্নাও আসবে না

মসলা বাটা বেশি হলে

মসলা বাটতে গিয়ে অনেক সময় এত বেশি পরিমাণ বাটা হয়ে যায়, পরে আর কাজে লাগে না। ব্যবহার করার পরও অতিরিক্ত কিছু মসলা থেকে যায়। সেটা ফেলে না দিয়ে কাজে লাগাবার একটা উপায় আছে। এর সাথে কিছু সরষের তেল এবং লবণ মিশিয়ে রাখুন। দেখবেন নষ্ট হবে না।

সহজে এলাচ গুঁড়া করতে

এলাচ গুঁড়া করতে যেন বেশি ঝক্কি সামলাতে না হয় সেই জন্য এলাচ গুঁড়া করার সময় এলাচে সামান্য চিনি দিয়ে নিন। তাহলে বেশি কষ্ট করতে হবে না।

মাছ ভাজার সময় কড়াইয়ে যেন না লেগে যায়

অনেকেরই মাছ ভাজতে গিয়ে মাছের অর্ধেক তেল কড়াইয়ে লেগে যায়। এই সমস্যা রোধ করতে তেলে একটু লবণ ছিটিয়ে দিন। এরপর দেখবেন, কেমন সুন্দর মাছ ভাজা হয়।

কাপড়ের লোহার দাগ পড়লে

 রান্নাঘরে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় কাপড়ে কৌটা বা চাকুর মরচের দাগ পড়ে যায় যেটা সহজে ওঠা যায় না। লেবুর রস এবং লবণ একসাথে এই দাগের ওপর ঘষলে ফল পাওয়া যায়। এতে ধীরে ধীরে দাগ পুরোটা উঠে যাবে।

বেগুনের তিতা ভাব দূর করতে

বেগুনের তিতা ভাব দূর করতে বেগুন কেটে লবণ পানিতে ১০-১৫ মিনিট চুবিয়ে  রাখুন। তাহলেই আর বেগুনের তিতা থাকবে না।

চায়ের দাগ লাগলে

কাপড়ে চায়ের দাগ লাগতেই পারে তবে সেটা দূর করার উপায় রয়েছে। একটু গ্লিসারিন ওই দাগের ওপর দিয়ে ভিজিয়ে দিন। পরের দিন ভাল করে কাপড়টি ধুয়ে দিন। দেখবেন দাগ উঠে ঝকঝক করছে।

মাছ ভাজার সময় তেলের ছিটা রোধ করতে

মাছ ভাজার সময়ই তেল অনেক ছিটে  আসছে? এ নিয়ে আর ভাববেন না। পরবর্তীতে মাছ ভাজার সময় তেলের  ছিটে উঠা রোধ করতে তেলে একটু পানি ছিটিয়ে দিন।

মাংস যদি সহজে না গলে

যে প্রাণীরই মাংস হোক না কেন তা যদি বয়স্ক হয় কিংবা এক বেলার মাংস আরেক বেলায় কেনা হয় তাহলে মাংস শক্ত হয়ে যায়। সহজে সেদ্ধ হতে চায় না। তখন পাত্রে কাঁচা সুপারি ফেলে দেবেন। দেখবেন মাংস সহজেই সেদ্ধ হয়ে যাবে। কাঁচা পেঁপের বড় একটা টুকরাও দিতে পারেন, এতেও কাজ হবে।

সরিষা বাটার তেতো ভাব দূর করতে

কিছু কিছু সরিষার বেশ তিতা হয়। সেই সকল সরিষা বাটার সময় লবণ, কাঁচামরিচ ও সামান্য পরিমাণ রসূন দিয়ে নিন তাহলে আর তাতে সরিষার তিতা ভাব থাকবে না।

হাতে হলুদের ছোপ পড়লে

রান্না করতে গিয়ে হাতে হলুদের ছাপ পড়া খুবই স্বাভাবিক। সাবান দিয়ে ধুলেও অনেক সময় সেই দাগ দূর করা যায় না। এই অবস্থায় কাপড় কাঁচা সোডা দিয়ে হাতটা ঘষে নিয়ে কিছু গ্লিসারিন মাখিয়ে দিলেই ছোপ উঠে যাবে।


আরো পড়ুন


কাটা আপেলের কালচে ভাব রোধ করতে

আপেল কাটার অল্প কিছুক্ষণ পরই তা কালচে হয়ে যায়।  এই কালচে ভাব দূর করার জন্য আপেল কেটে তাতে একটু লেবুর রস দিয়ে দিতে পারেন। তাহলে আর কালচে হবে না।

সয়াবিন তেলের উটকো গন্ধ দূর করতে

সয়াবিন বা খাবার তেল কোন পাত্রে অনেক দিন যাবত রেখে দিলে সেখান থেকে একটা উটকো গন্ধ আসে। ফলে সেই তেল ব্যবহার করতেও মনে বেশ প্রশ্ন জাগে যে স্বাস্থ্যসম্মত তেল ব্যবহার করছি তো! তাই এই গন্ধ দূর করতে তেলের পাত্রে একটা গোলমরিচ রেখে দিন তাহলে আর এই উটকো গন্ধ হবে না।

বেরেস্তার পেঁয়াজ লাল করতে

বেরেস্তা পেঁয়াজ লাল হতে অনেক সময় নেয়। সব সময় আমাদের হাতে এতটা সময় থাকে না। তাই তাড়াতাড়ি বেরেস্তার পেঁয়াজ লাল করতে পেঁয়াজগুলি একটু পানি দিয়ে ভেজে নিন।

আগুনে পুড়ে গেলে

রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে অসাবধানবসত আগুনে হাত বা শরীরের অন্য কোন অংশ পুড়ে যেতে পারে। এটা খুবই সচেতন ঘটনা এবং এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকা উচিৎ। ইদানিং আগুনে পুড়ে যাওয়ার জন্য অনেক মলম জাতীয় ওষুধ বাজারে পাওয়া যায় কিন্তু অনেক সময় বাড়িতে ওষুধ না থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে খাঁটি সর্ষের তেল পোড়া যায়গায় বেশি করে লাগিয়ে দিলে উপশম হবে। অথবা অল্প কাপড় কাচা সোডা পানির সঙ্গে মিশিয়ে ঘন করে লাগালেও কাজ হয়। আবার নারকেল তেল ও চুন মিশিয়ে দগ্ধ স্থানে লাগালেও বেশ উপকার পাওয়া যায়। এই কাজগুলো শুধুমাত্র সাময়িকভাবে প্রযোজ্য। যথাসময়ে ডাক্তার ডাকা উচিৎ।

কী শান্তি লাগছে, তাই না? রান্নাঘরের এসব টুকিটাকি টিপস বাঁচিয়ে দিবে মশলা যা আগে ফেলে দিতে হতো। তরকারিতে হলুদ বেশিহয়ে যাবার ভয় আর থাকলো নাহ। আটা-ময়দায় পোকা এবার আসবেই নাহ! লবণ একটু বেশি হলেও বা ক্ষতি কী? এইসব টেনশন তো উপরের টিপস মেনেই সামলে নেবেন আপনারা!

Leave a Reply