এসি-র দাপট যতই বাড়ুক, গরমকাল মানে আজও ঘরে ঘরে সেই পরিচিত ছবিই ভেসে ওঠে। গরমে ঘেমে, বিধ্বস্ত হয়ে, প্রায় সিদ্ধ হতে হতে আপনি কাহিল, তখন সিলিং থেকে ঝুলতে থাকা তিন ডানা ওয়ালা মেশিনটি ছাড়া উপায় থাকে না। আবার যখন এক রামে রক্ষে হয় না, তখন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করে টেবল ফ্যান বা স্ট্যান্ড ফ্যান। তবে ফ্যান যেমনই হোক না কেন, এ দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যানে থাকে তিনটি ব্লেড। অনেক সময় ছোট ফ্যানে চারটি ব্লেড দেখা গেলেও বাংলাদেশ বা ভারতে তা বিরল।
যদি মনে প্রশ্ন জেগে থাকে কেন এমন হয় ?? কিংবা একটু আগে বাড়িয়ে যদি ভেবে ফেলেন আমেরিকা তো আমেরিকাই তারা সব কিছু আমাদের চেয়ে বেশী ব্যবহার করে তাহলে আমি বলবো একটু থাকুন এবং কৌতুহলী বাঙালীর আজকের ব্লগটা আগে পরে নিন ।
একদম শুরু থেকে শুরু করি!
পাখা সংখ্যা ১-
একটা পাখা হলে সেটা ফ্যানের অভিকর্ষজ কেন্দ্র মাঝে রাখেনা। ফলে ফ্যান ঠিকমতো ঘুরতে পারেনা। ভাইব্রেশন বা আওয়াজ সব চাইতে বেশি ,স্পীড সব থেকে বেশি। হাওয়া কম ।
পাখা সংখ্যা ২-
দুইটা ফ্যানে নিশ্চিতভাবে ফ্যানকে প্রতিসম রূপ দেয় এবং ফ্যানের ঘুরতে কোন অসুবিধা হয় না। হাওয়া সবচাইতে বেশি এবং তীক্ষ্ম , ফলস্বরূপ হাওয়া অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। স্পীড, ভাইব্রেশন এবং আওয়াজ কিছুটা আগের তুলনায় কম হলেও খুব বেশীই মনে হয় । উদাহরণ যে কোনো হাইসপিড ফান বিশেষ করে অনুষ্ঠান বাড়িতে যেগুলি ব্যাবহার হয়।
পাখা সংখ্যা ৩–
সুইট স্পট। ২ পাখার থেকে অনেক বেশি বাতাস পাওয়া সম্ভব যদি ফ্যানে তিনটা পাখা থাকে । হাওয়া মাঝারি ।তীক্ষ্ণতা মাঝারি। ভাইব্রেশন, স্পীড এবং আওয়াজ সামঞ্জস্য পূর্ণ এবং আগের দুইটার তুলনায় কম। এর উদাহরণ নিষ্প্রয়োজন।তবে এটা ঠিক আমাদের উপমহাদেশের ওয়েদার কন্ডিশন অনুযায়ী এটা খুব ইকোনমিক এবং এফিসিয়েন্ট।
৩ টি হাত বিশিষ্ট পাখা হাল্কা হয়, উচ্চ গতিতে ঘুরতে পারে ও অধিক বাতাস সঞ্চালনে সহায়ক এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়। এতে আমাদের কি লাভ?
আরো পড়ুন
- ওয়ানডে ম্যাচের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেঞ্চুরিয়ান প্রথম নারী ফারজানা
- দেশের প্রথম নারী প্যারা কমান্ডো জান্নাতুল ফেরদৌস
- কেন এখন বিয়ের উপহার (Marriage Gift) উপহার হিসেবে নগদ টাকাই বেশি প্রত্যাশিত !!
- স্বাস্থ্যকর নখ (Nails) বজায় রাখার টিপস
- লিপস্টিক এর আবিষ্কার
তাপগতীয় (থার্মোডাইনামিকস) ব্যাখ্যায় এর কারণ ছোট করে বললে বলা যায় যে, পাখা বাতাসের তাপমাত্রা কমাতে পারে না। কিন্তু আমরা জানি যে ৩ টি হাত বিশিষ্ট পাখা হাল্কা হওয়ায় উচ্চ গতিতে ঘুরতে পারে ও অধিক বাতাস সঞ্চালন করতে পারে। পাখার এ বৈশিষ্ট্যসমূহ শরীরের ঘামকে দ্রুত বাষ্পে রুপান্তর করতে সাহায্য করে ফলে আমরা শরীরে বাতাসকে ঠান্ডা অনুভব করি কারণ যখনি আমরা পাখা দিয়ে বাতাস করি তখন আর কিছুই ঘটে না গায়ের আশপাশে থাকা গরম বাতাসগুলো সরে যায় আর নতুন অনুত্তপ্ত বাতাস শরীরের সংস্পর্শে আসে। আর অনুতপ্ত ঠাণ্ডা বাতাস শরীরের কাছে এলে আবার শরীর তার থেকে তাপ ত্যাগ করতে পারে। এরকম তাপ ত্যাগ করার মাধ্যমেই ঠাণ্ডা অনুভব করি। শরীরের ভিতরের তাপ ও বাতাসের তাপের মাঝে তাপের আদান প্রদান ঘটে। কিভাবে?
যখন ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে শরীর আসে তখন বাতাসের তাপমাত্রার সাথে শরীরের তাপমাত্রার পার্থক্য হয়। বাতাস থেকে ঠাণ্ডা চলে আসে শরীরে আর শরীর থেকে গরম চলে যায় বাতাসে।
পাখা সংখ্যা ৪–
এক্ষেত্রে ৩ পাখার চেয়ে অবশ্যই বাতাস বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে অর্থনীতি চলে আসে। ৪ পাখা তৈরী তিন পাখার চেয়ে ব্যায়বহুল। কিন্তু ২ থেকে ৩ পাখা করা যেরকম বিশাল একটা পার্থক্য তৈরী করে বাতাস পাওয়ার দিক থেকে, ৩ থেকে ৪ পাখা করা হলে বাতাসের এত পার্থক্য পাওয়া যায়না। অর্থনৈতিক ভাবে ৪ পাখা লাভজনক না। অর্থনীতির ভাষায় একে বলে “Diminishing return”। অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ইনভেস্ট বাড়ালে রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট বাড়তেই থাকবে, কিন্তু প্রতিবার বাড়ার পরিমাণ আগের থেকে কম হবে। তাই আমাদের চারদিকের সবকিছুতেই এরকম অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক একটা পর্যায় খুঁজে পাওয়া যায়। এই পর্যায়ের পরে ইনভেস্ট করা বোকামী।
সাধারনত শীতপ্রধান দেশে বেশি প্রচলিত, এখন অনেকে এয়ার কন্ডিশন এর সাথে ফ্যান চালাতে ভালোবাসেন। সেখানে এইরকম পাখা উপযুক্ত। একটি নির্দিষ্ট ইকোনমিক উষ্ণতায় এসি সেট করে ফ্যান চালালে ইলেকট্রিক বিল কম আসে।
বিশেষ করে আমেরিকা বা কানাডায় শীত প্রধান দেশ বা অঞ্চল গুলোতে ৪ বা ৫ টি হাত বিশিষ্ট ছাদ পাখা ব্যবহৃত হয়। সেগুলো ওজনে তুলনামূলক ভারী, নির্দিষ্ট ৩টি গতিতে চলতে পারে ও তা খুবই ধীর গতির হয়। সে পাখাগুলো কক্ষের AC বা Heater এর বাতাস বা তাপ পুরো কক্ষে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করে।