আরে বাবা! একটা ডিম তো ডিমই, তা-ই না? আম্মু যখন গরম গরম ভেজে এনে দেয় সামনে, তখন কি ভাবার অত সময় থাকে ডিমটা কেমন ছিল দেখতে? তবে একটু ভাবলেইবা দোষ কোথায় বলো? আমাদের চারপাশের সব ডিম কি দেখতে একই রকম? সবগুলো কিন্তু পুরো ডিম্বাকৃতিরও নয়।
ডিম্বাকৃতির রকমফের নিয়েও আরেক জ্বালা। হাঁসের ডিম একটু লম্বাটে। আর দেশি মুরগির ডিম তো প্রায় গোল হতে হতেই থমকে গেছে যেন। কোয়েল পাখির ডিমে তো আবার ছোপ ছোপ নকশা।
গ্রামে যাদের বাড়ি, তারা তো নিশ্চয় হরেক রকম পাখির ডিমও দেখেছ। সেখানেও একেক পাখির ডিমে একেক ভেলকি চলে। পাহাড়ি পাখিগুলোর ডিম আবার একটু পেটমোটা কৌণিক আকৃতির হয়, যেন সেগুলো পাহাড়ের গায়ের মাটির গর্তে আটকে থাকতে পারে।
সামান্য ডিমের এত রকমফের নিয়ে তুমি-আমি না ভাবলেও জ্ঞানী-গুণী গবেষকেরা কিন্তু বসে নেই। ইতিমধ্যে আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গবেষক প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রজাতির প্রাণীর ৫০ হাজার ডিম সংগ্রহ করেছেন।
চললে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। ডিমগুলোকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ করেছেন তাঁরা: উপবৃত্তাকার—যেগুলোর দৈর্ঘ্য প্রস্থের তুলনায় কিছুটা বড় এবং অসম আকৃতি—সেগুলোর এক প্রান্ত কোনাকুনি ও অপর প্রান্ত গোল।
আরো পড়ুন
- ওয়ানডে ম্যাচের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেঞ্চুরিয়ান প্রথম নারী ফারজানা
- দেশের প্রথম নারী প্যারা কমান্ডো জান্নাতুল ফেরদৌস
- কেন এখন বিয়ের উপহার (Marriage Gift) উপহার হিসেবে নগদ টাকাই বেশি প্রত্যাশিত !!
- স্বাস্থ্যকর নখ (Nails) বজায় রাখার টিপস
- লিপস্টিক এর আবিষ্কার
প্রজাতিভেদে ডিমের এই আকার ভিন্ন হওয়ার কারণ হিসেবে নানা রকম যুক্তির প্রচলন থাকলেও সেগুলোর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা মেলা ভার। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হতো, পাখির ডানার আকৃতির সঙ্গেই মিল রেখে তৈরি হয় ডিমের গঠন।
যেসব পাখির ডানা তুলনামূলকভাবে বেশি বড়, তাদের ডিম একটু লম্বাটে হয়। কারণ, এদের ওড়ার সময় শ্রোণি ও ডিম্বনালিকে বেশ সংকুচিত হতে হয়। ফলে লম্বাটে আকৃতির ডিম তাদের উড়তে সুবিধা করে দেয়।
অন্যদিকে যেসব পাখি উড়তে পারে না, তাদের ডিম কিন্তু প্রায় গোলাকৃতির। যেমন উটপাখি। তবে পেঙ্গুইন কিন্তু উড়তে না পারলেও সাঁতার কাটার কারণে এদেরও দেহের গঠন একই। ফলে এদের ডিমও লম্বাটে হয়।
গবেষণা কিন্তু শুধু পাখির ডিমেই থেমে থাকেনি। ম্যানিয়াপ্রোটানস, এক প্রজাতির ডাইনোসর, যাদের থেকে পাখিদের উদ্ভব হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তাদের ডিম কিন্তু ছিল অসম আকৃতির।
অন্যদিকে ডাইনোসরদের আরেক প্রজাতি থেকে উদ্ভূত সরীসৃপ, কুমিরের ডিম কিন্তু উপবৃত্তাকার আকৃতির। এই একই ধাপের দুটি প্রাণীর ডিমের আকৃতির ভিন্নতা কিন্তু তাদের ডিমে তা দেওয়ার ভিন্ন উপায়ের সঙ্গে মিল রেখে সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে এই মজাদার গবেষণার আরেক ধাপে দেখা যায়, ডিমগুলোর আকৃতি কিন্তু এগুলোর শক্ত খোলসের ওপর নির্ভর করে না। তাই ডিমের ডিম্বাকৃতির রহস্যভেদের জন্য এখন জানা প্রয়োজন কীভাবে ডিমের ভেতরের উপাদানগুলো সাজানো হচ্ছে। ফলে এবার ডিম খেতে গেলেই একটু ভেবে নিয়ো কিন্তু কোন আকারের ডিম তুমি খাও আর কোনটা পাও পরীক্ষার খাতায়।