ধরুন বিমানে প্যারাস্যুটের ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানটি ৩০,০০০ ফিট ওপর দিয়ে ঘন্টায় ৯০০ কিমি গতিতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আপনি শুনলেন আপনাকে প্যারাস্যুট নিয়ে ৩০,০০০ ফিট ওপর থেকে লাফ দিতে হবে। আপনি কি লাফ দেবেন? অধিকাংশ মানুষ কিন্তু লাফ দেবে না। কারণ হচ্ছে আতংক। যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকলে প্যারাস্যুট পিঠে নিয়ে দরজার কাছে যেতে যেতেই আতংকে অনেকের হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেটা কি কম বিপজ্জনক?
৩০০০০ ফিট উচ্চতায় বাতাসের তাপমাত্রা মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর বাতাসের চাপ সাধারণ উচ্চতার প্রায় ৪০% কম। এই অবস্থায় প্লেনের কেবিনে আপনি বেচে আছেন কেবিন প্রাশারাইজেশন আর ক্লাইমেট কন্ট্রেলের কারনে। এছাড়াও এই উচ্চতায় অক্সিজেন প্রায় নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় যদি শুধুমাত্র কেবিন প্রাশারাইজেশন মেশিন নষ্ট হয়ে যায়, তাহলেই মাত্র ৯০ সেকেন্ডে প্লেনের সবাই বেহুশ হবে নতুবা মারা যাবে। এইরকম দুর্ঘটনা হয়েছে অতীতে। এই জন্যই কেবিনে প্রতিটি সিটে অক্সিজেন মাস্ক থাকে। আর প্যারাশুটের কথা বললে বলা উচিৎ বাইরের লো প্রেশারে হাতির শক্তি দিয়েও দরজা খোলা যাবে না। আর যদি খোলা যায়ও তাহলে সবাই জমে বরফ হয়ো যাবে মুহুর্তে। তাই প্যারাশুটের কল্পনা বাদ দেয়াই শ্রেয়।
আবার ধরুন দরজা দিয়ে সবাই লাফ দিচ্ছে। এই লাফ দেয়াটাও কিন্তু কিছু মাপজোখ করে দিতে হয়। লাইন ধরে সবাই লাফ দেবে না। একজন লাফ দেবার কিছু পরে আরেকজন লাফ দেবেন। মিনিটে যদি দু’জন করেও লাফ দেন, তবে ৩০০ জন যাত্রীর একটি বিমান থেকে সবাইকে লাফ দিতে হলে অন্তত আড়াই ঘন্টা লাগবে। এত লম্বা সময় ধরে বিমান থেকে যাত্রী নামানোটাও কিন্তু বিপজ্জনক।
আবার এমন ভাবে লাফ দিতে হবে যাতে করে বিমানের অন্য কোন অংশের (পাখা, প্রপেলার, বডি প্রভৃতি) সাথে ধাক্কা না লাগে। কারণ ধাক্কা লাগলে স্রেফ ছাতু হয়ে যেতে হবে। এর জন্যও দরকার যথাযথ প্রশিক্ষণ।
প্রতিটি প্যারাস্যুটের দাম কিন্তু কম নয় – অন্তত পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার পড়বে। তখন কিন্তু এই খরচটাও আপনার টিকেটের দামের সাথে যুক্ত হবে।
প্যারাশুট ও এর প্রয়োজনীয় সামগ্রী গুলো যথেষ্ট ভারী হয়, তাই ৩০০ শত যাত্রীর জন্য অতগুলো প্লেনে নিলে, প্লেন উড্ডয়ন করাই কঠিন হবে।
তাছাড়া অধিকাংশ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে বিমান ওঠা-নামার সময়, মাঝ আকাশে উড্ডয়নকালে নয়। বিমান ওঠা-নামার সময় প্যারাস্যুট ব্যবহারের পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না। যদি মাঝ আকাশে হয় তাহলে সময় পাওয়া যেতে পারে (আড়াই ঘন্টার কথা মনে আছে তো?)।
আর স্কাই ডাইভিংয়ের ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণ নিয়ে ক’জনই বা বিমানে চড়তে চাইবেন?
আশা করি বুঝতে পেরেছেন, কেন বাণিজ্যিক বিমানে প্যারাস্যুট খুব একটা সহজ কিছু নয়।