কাগজ ভাজ করে চাঁদে যাওয়া, যুক্তিটি অদ্ভুত না? যদি কাগজ ভাঁজ করেই চাঁদে যাওয়া যায় তবে আর মহাকাশ যান এর দরকার কি? আসলে এটি একটি গণনার কথা বলা হয়েছে। এরকম অনেক কিছু আছে যা খাতা কলমে সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে তা করা যায় না। আজকে ঠিক সেরকমই একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করব।[1]
ধরুন আপনাকে একটি কাগজ দেওয়া হল। আপনাকে বলা হল কাগজটি ৪২ বার ভাঁজ করুন। আপনি খুব বেশি হলে ১৫ বার কাগজটিকে ভাঁজ করতে পারবেন। ৪২ বার একটি কাগজকে ভাঁজ করা সাধারণত অসম্ভব ব্যাপার। আপনি একটি A4 কাগজ কে ৮ বার ভাঁজ করতে পারবেন। ৮ বার ভাঁজ করার পর আপনি কিভাবে আর ভাঁজ করবেন?
যদি আমরা কিছু বাস্তব সীমাবদ্ধতাগুলি ভুলে যাই এবং যদি আমরা কল্পনা করে নেই যে আমরা যত বার ইচ্ছে একটি কাগজ ভাঁজ করতে পারি, তবে আমরা নিম্নলিখিত গননা গুলো করতে পারি।
ধরুন আমাদের কাছে একটি পাতলা কাগজ রয়েছে যা কেবলমাত্র ০.০০১ সেন্টিমিটার পুরু। এবার যদি কাগজটি একবার ভাঁজ করি তবে তা ০.০০২ সেন্টিমিটার পুরু হয়ে যাবে। আর দুই বার ভাঁজ করলে তা হবে ০.০০৪ সেন্টিমিটার। ঠিক সেই ভাবে তিন বারে হবে ০.০০৮ সেন্টিমিটার এবং চার বারে হবে ০.০১৬ সেন্টিমিটার।
# Folds | Thickness (mm) |
0 | 0.1 |
1 | 0.2 |
2 | 0.4 |
3 | 0.8 |
4 | 1.6 |
5 | 3.2 |
6 | 6.4 |
7 | 12.8 |
8 | 25.6 |
9 | 51.2 |
10 | 102.4 |
11 | 204.8 |
12 | 409.6 |
13 | 819.2 |
14 | 1,638.4 |
15 | 3,276.8 |
16 | 6,553.6 |
17 | 13,107.2 |
18 | 26,214.4 |
19 | 52,428.8 |
20 | 104,857.6 |
21 | 209,715.2 |
22 | 419,430.4 |
23 | 838,860.8 |
24 | 1,677,721.6 |
25 | 3,355,443.2 |
26 | 6,710,886.4 |
27 | 13,421,773 |
28 | 26,843,546 |
29 | 53,687,091 |
30 | 107,374,182 |
31 | 214,748,365 |
32 | 429,496,730 |
33 | 858,993,459 |
34 | 1,717,986,918 |
35 | 3,435,973,837 |
36 | 6,871,947,674 |
37 | 13,743,895,347 |
38 | 27,487,790,694 |
39 | 54,975,581,389 |
40 | 109,951,162,778 |
41 | 219,902,325,555 |
42 | 439,804,651,110 |
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সংখ্যা গুলি হল পাওয়ার অফ ২। এবার যদি N তম ভাঁজ করা হয় তবে হিসেব দাড়ায় n = 2^n/1000 সেন্টিমিটার।তবে ১৭ তম ভাঁজের পর হিসেব দাড়ায় 2^17/1000 = 131 সেন্টিমিটার।
২৫ তম ভাঁজের পর পরে এটি ৩৩,৫৫৪ সেমি বা ০.২৫ মাইল হবে। যা কিনা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের উচ্চতার সমান হবে। আপনি যদি ৩০ বার কোনও কাগজ ভাঁজ করেন তবে তা ওপরের হিসেব অনুযায়ী ৬.৬৭ মাইল হবে। আবার যদি আপনি এটি ৪০ বার ভাঁজ করেন তবে এটি আপনাকে মহাকাশে নিয়ে যেতে পারে।
সুতরাং ০.০০১ সেন্টিমিটার পুরু একটি কাগজ দিয়ে চাঁদে পৌঁছতে আপনাকে ৪৫ বার সেই কাগজটি ভাঁজ করতে হবে। তবে আপনি যখন একটি কাগজের টুকরো ভাঁজ করবেন, ঠিক একই হারে সেই কাগজটির ক্ষেত্রফল ও হ্রাস পেতে থাকবে। সুতরাং আপনি যদি A4 আকারের কাগজটি 45 বার ভাঁজ করেন তবে এর ক্ষেত্রফল হবে 1.77 × 10-15m2। পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের ক্রস-সেকশন করলে ক্ষেত্রফল দাড়ায় 10^-28xm^2।
সুতরাং শেষ পর্যন্ত যদি আপনি একটি কাগজ ৪২/৪৫ বার ভাঁজ করতে পারেন, আপনি চাঁদে পৌঁছে যাবেন। তবে এটি পরমাণু বা অণুগুলির একক স্তরের মতো দেখাবে, যা দেখতে পাওয়া অসম্ভব। সুতরাং, শেষ পর্যন্ত, আপনি কিছুই দেখতে পাবেন না!
২০০২ সালে Britney Crystal Gallivan দেখান একটা[2] কাগজকে ১২ ভাঁজে ভাঁজ করা সম্ভব । তবে তিনি ৪০০০ ফুট ( ১২০০ মিটার ) লম্বা toilet paper ব্যবহার করেন ভাঁজ করার জন্য । কিন্তু তখনও পর্যন্ত সবার বিশ্বাস ছিল ৮ বারে বেশি কোন কাগজকে ভাঁজ সম্ভব নয় । তিনি আরও একটা প্রয়োজনীয় আবিষ্কার করেন যে , কাগজকে বিভিন্ন দিকে ভাঁজ করার থাকে একদিকে ভাঁজ করে গেলে কম আয়তন হয় যার ফলে ভাঁজ করতে সুবিধা হয় । তিনি শুধু করেই দেখায় থেমে থাকেননি , এর জন্য সমীকরণ ও দিয়েছেন ।
কাগজের পুরুত W ( বিভিন্ন দিকে ভাঁজ করে )
W = \pi t 2^{(3/2)\left(n-1\right)}.
একই দিকে ভাঁজ করে লম্বা কোন কাগজের দৈঘ্য L
L = \frac{\pi t}{6}\left(2^{n}+4\right)\left(2^{n}-1\right),
এখানে t কাগজের পুরুত, W কাগজের পুরুত ভাঁজ করার পরে, L লম্বা কাগজের দৈঘ্য ( এক দিক থাকে ভাঁজ করার জন্য ) এবং n যত গুলো ভাঁজ করার ইচ্ছা আছে । এই সমীকরণ থাকে আর একটা তথ্য পাই । কাগজকে তখনি ভাঁজ করা সম্ভব হবে যখন এটা \pi গুনন বেশি লম্বা হবে এর পুরুত থাকে এই ভাবে প্রতি ভাঁজের পরে এটার দৈঘ্য কমতে থাকে।এটাই মুলত সুভঙ্করের ফাঁকি ।
Most Times To Fold A Piece Of Paper : Guinness World Records
Britney Gallivan এর দেখানো পথে অনেকে চেষ্টা করেছে । তবে দীর্ঘ ৭ বছর চেষ্টার পরে ৪ ডিসেম্বার, ২০১১ সালে MIT তে St. Mark স্কুলের গণিত বিভাগের ছাত্ররা MIT এর শিক্ষক James Tanton এর নেতৃত্বে MIT এর Infinite Hallway তে Britney Gallivan এর ১২ টি ভাঁজের রেকর্ডটা ভাঙ্গে ।
তারা নতুন রেকর্ড হিসেবে ১৩ টা ভাঁজ করতে সমর্থ হয় । তবে এই একটা ভাঁজ বাড়াতে তাদেরকে ৫০০০০ ফিট লম্বা toilet paper ব্যবহার করতে হইয়েছে । যেহেতু এত বড় কাগজ পাওয়া সম্ভব নয় তাই তারা প্রথমে একটির উপর আরেকটি রেখে ৬৪ টা layers তৈরি করে । তারপরে তারা কর্নার থাকে আঠা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে সেটাকে ৬ টা ভাঁজে পরিণত করে । এর পরে ওটাকে একই দিকে ভাঁজ দিতে থাকে । ১৩ ভাঁজ করার পরে এটা মোট ৮১৯২ layers হয় যা ১.৫ মিটার প্রস্থে ও ৭৬ সেন্টিমিটার উচু হয় ।
লিখেছেন – রশ্মি শাহ্