‘লিপস্টিক’ (Lipstick)শব্দটি শুনেই আমাদের চোখে হাসি ভরা রঙিন ঠোঁটের কোনো এক নারী মুখ ভেসে উঠে । শিশুকাল থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত অধিকাংশ নারীর প্রিয় প্রসাধনী সামগ্রীর মধ্যে উপরের দিকে স্থান করে আছে লিপস্টিক। সাজ সামগ্রীর মধ্যে নারীদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রসাধনী তাই লিপস্টিক।নিজেকে আরো সুন্দর ও পরিপাটি এবং আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সাহায্য করে লিপস্টিক।
ছোটবেলায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মায়ের লিপস্টিক এ ঠোঁট রাঙানোর মতন মধুর স্মৃতি কম বেশি সব কন্যা শিশুরই আছে। আবার বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে বহু কর্মজীবী নারী অথবা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণীরা নিজেদের সৌন্দর্য চর্চায় বেছে নেন লিপস্টিক। উজ্জ্বল রঙে নিজেদের ঠোঁট রাঙিয়ে ঘরের বাইরে বের হন তারা।
লিপস্টিকঃ
লিপস্টিক বা ইংরেজিতে বলা হয় LIPSTICK । লিপস্টিক হচ্ছে এক প্রকার প্রসাধনী দ্রব্য যা বিভিন্ন ধরনের পদার্থ যেমন – তেল, মোম এবং ত্বক কোমলকারী পদার্থের মিশ্রণ এর মাধ্যমে তৈরি হয়, যা মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ঠোঁটে দেয়া হয়। লিপস্টিক অনেক ধরনের হতে পারে। লিপস্টিক সাধারণত নারীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং রূপসজ্জার কার্য ব্যতীত ছেলেরা এটি ব্যবহার করেন না। নারীরা ও বয়সন্ধিকালে লিপস্টিক ব্যবহার করেন না, কারণ সেসময় ঠোঁটের প্রাকৃতিক রং ও ভাঁজ, সর্বোপরি সৌন্দর্য অটুট থাকে।
অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে প্রাচীনকালে লিপস্টিক আবিষ্কারের সময় এটি নারী পুরুষ উভয়েরই ব্যবহারের উপাদান ছিল। এটি শুধু প্রসাধনী হিসেবেই নয়, ঔষধি হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
যুক্তরাষ্ট্রের জনক বলে পরিচিত ” জর্জ ওয়াশিংটন” মাঝে মধ্যে ঠোঁটে লিপস্টিক দিতেন।
তবে তখন লিপস্টিক শব্দটির সাথে মানুষ পরিচিত ছিল না। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা গাছের ছাল, সীসা, মেহেদি, জামের রস, ফুলের রস, পান পাতা, মাটি থেকে রঙ তৈরি করে ঠোঁটে লাগাতো। এই রঙ গুলো ঠোঁটে আটকানোর জন্য আঠা ব্যবহার করতো।
অবিশ্বাস্য হলে ও রঙ্গক গুঁড়ো, পচা পোকামাকড়, মাখন, ময়দা, এবং জলপাই তেল যেমন জিনিষ গঠিত লিপস্টিক তৈরি করা হয়।
মেসোপটেমীয় সভ্যতার এক শ্রেনির মানুষ ঠোঁটে লাগানোর জন্য ব্যাবহার করত রত্নচূড়। এছাড়া মিশরীয় ও রোমানরা রঞ্জক পদার্থ, যেমন – এলজিন, আয়োডিন, ব্রোমিনের সংমিশ্রণে রঙ প্রস্তুত করে ঠোঁটে লাগাতো। ফারাও রাণী ক্লিওপেট্রা গাঢ় লাল রঙ ব্যাবহার করতেন ঠোঁটে। তখনকার সময়ে মৃত কীট থেকেও রঙ সংগ্রহ করা হতো।
লিপস্টিক এর ইতিহাসঃ
লিপস্টিক নামের প্রচলন হয়েছে ১৮৮০ সালে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপস্টিক উৎপাদন করেন ফ্রান্স।সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপস্টিক তৈরি হয় ১৮৮০ সালে প্যারিসে সুগন্ধি শিল্পে। ১৮৯০ সালের শেষদিকে ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে লিপস্টিক বিক্রি করা শুরু হয় এবং এর ব্যাপক প্রচলনে বিজ্ঞাপন প্রচারও শুরু হয়।
ধারণা করা হয়, ১৯২০ সালের আগ পর্যন্ত ‘লিপস্টিক’ শব্দটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যবহারের চল ছিল না। প্রসাধনসামগ্রীর জগতের গুরুত্বপূর্ণ ব্র্যান্ড ম্যাক্স ফ্যাক্টরের সোসাইটি মেকআপ নামের পণ্যটি চালু করার পর থেকে প্রথম এই শব্দ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেই থেকে শুরু লিপস্টিকের ব্যবহার।
১৯২৭ সালে, ফরাসি রসায়নবিদ পল বাউড্রিকউইক্স একটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যা “রুজ বাইসার” নামে পরিচিত, এটি প্রথম চুম্বন-প্রমাণ লিপস্টিক বলে বিবেচিত। অবাক করার বিষয় এই যে, “রুজ বাইসার” নিজের ঠোঁটের উপর এতটাই ভালো ছিল যে এটি অপসারণের জন্য কঠোর পরিশ্রমের পর বাজার থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
কিছু বছর পরে ১৯৫০ সালে, রসায়নবিদ হেলেন বিশপ দীর্ঘমেয়াদী লিপস্টিকের একটি নতুন সংস্করণ আবিষ্কার করেন যা “না-স্মিয়ার লিপস্টিক ” নামে পরিচিত ছিল যা বাণিজ্যিকভাবে খুব সফল ছিল।
প্রাচীন সুমেরীয় এবং সিন্ধু উপত্যকার পুরুষ এবং মহিলারা সম্ভবত প্রায়ন যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৫০০০ বছর আগে লিপস্টিক উদ্ভাবন এবং পরেছিলেন। সুমেরীয়রা রত্ন পাথর চূর্ণ করে তাদের মুখমণ্ডল সাজাতে ব্যবহার করত, প্রধানত ঠোঁটে এবং চোখের চারপাশে। ক্লিওপেট্রার মতো মিশরীয়রা তাদের ঠোঁটে লাল রঙ তৈরি করতে বাগ (কারমাইন) চূর্ণ করে।
ষোল শতকে রানী প্রথম এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণের পর প্রসাধনী হালে চলে এলো। তিনি প্রসাধনীর প্রতি ছিলেন বিশেষভাবে আকৃষ্ট। সাধারণত ঠোঁটে লাল রঙ ব্যবহার করতেন। এরপর কোসিনিয়ালের কারমাইন রঙের সঙ্গে শ্বেতস্ফটিক মিশিয়ে তৈরি হলো আরেক ধরনের লিপস্টিক। এই মিশ্রণকে শক্ত করার জন্য রঙিন কাগজে মুড়িয়ে রোদে শুকানো হতো।
১৬৫৬ সালে একজন জপমালা বা তসবিহ কারিগর ঘটালেন এক যুগান্তকারী ঘটনা। লোকটি ফরাসি, নাম ফ্রাঁসোয়া জ্যাকুইন। তিনি কিছু মাছের আঁশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে ফেললেন কৃত্রিম মুক্তার নির্যাস। এই নির্যাস ক্রিস্টালাইন গুয়ানাইন নামে পরিচিত, যা আধুনিক প্রসাধনীতে একটি সিনথেটিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লিপস্টিকে একে ব্যবহার করা হয় একটি স্বচ্ছ, উজ্জ্বল আর চকচকে আভা দিতে।
চোখ ধাঁধানো রঙের পরিবর্তে ১৮ শতকে ইউরোপ জুড়ে মানুষের ঠোঁটে জায়গা করে নিলো হালকা রঙ। যদিও ফ্রান্স এক্ষেত্রে তাদের পুরনো হালেই রয়ে গেলো। মোম, বিভিন্ন প্রাণীর অস্থিমজ্জা ও স্বর্ণপাতা চলে এলো ঠোঁট রঙ করার নতুন উপাদান হিসেবে।
রানি ভিক্টোরিয়ার যুগে প্রসাধনী ব্যবহার করাকে ধরে নেওয়া হতো অভিনেত্রী, সন্দেহজনক চরিত্রের কিংবা যৌনকর্মীদের কাজ বলে। উচ্চ শ্রেণীর নারীরা এ যুগে কদাচিৎ প্রসাধনী ব্যবহার করতেন। জোরালো ভাবেই লিপস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা ছিলো। ফলে শৌখিন নারীরা কখনো কখনো লুকিয়ে লিপস্টিকসহ অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহার করতেন। আবার অনেক নারীই আবেদনময়ী ঠোঁট পাওয়ার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেন। এর মধ্যে ছিল ঠোঁটে সুঁই ফোটানো, ঠোঁট কামড়ানো কিংবা বিভিন্ন দানাদার উপাদান দিয়ে ঠোঁট ঘষা। ঠোঁটে বাম ব্যবহার করা ছিল ঠোঁট সাজানোর এক জনপ্রিয় উপায়। মাঝে মাঝে নারীরা বামের সঙ্গে গোপনে রঙ মেশাতেন।
১৯ শতকের শেষদিকে আবার ঘুরে দাঁড়ায় প্রসাধনী শিল্প। ১৮৮০ সালে প্যারিসে সুগন্ধী শিল্পেই তৈরি হয় বাণিজ্যিক লিপস্টিক। ১৮৯০ সালের শেষদিকে ইউরোপ ও আমেরিকা জুড়ে লিপস্টিক বিক্রি করা শুরু হয়। এর প্রচার প্রসারে বিজ্ঞাপন দেওয়াও শুরু হয়। এসব লিপস্টিক কাগজের কৌটায় বা টিউবে বিক্রি করা হতো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে লিপস্টিকের বাজার ছিল রমরমা। কারণ “উইনস্টন চার্চিল” লিপস্টিক পছন্দ করতেন। তার আশপাশের নারীরা লিপস্টিক লাগিয়ে ঘুরছেন, তা দেখতে তিনি পছন্দ করতেন। ফলে লিপস্টিকসহ অন্যান্য প্রসাধনীর উৎপাদন বন্ধ না করতে তিনি নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের আশি শতাংশ নারী লিপস্টিকের ভক্ত, যা ফ্রান্সের তুলনায় ১০ ভাগ বেশি।
শতকের ঘূর্ণনে প্রসাধনী হয়ে যায় নারীদের জন্য আধুনিক ও উন্মুক্ত। ইউরোপ-আমেরিকা জুড়ে ফ্যাশন ম্যাগজিনগুলো এক ধারাবাহিক জনপ্রিয় উচ্চতায় পৌঁছায়। পুরুষেরা খুশি হলো এই ভেবে যে নারীরা এখন রাজনৈতিক ব্যাপার কিংবা ভোটাধিকার নিয়ে মাথা ঘামানোর বদলে ফ্যাশনের প্রতি বেশি আগ্রহী। এ সময়ে চার্লস গিবসনের তুলির আঁচড়ে উঠে আসা চিত্রকর্ম ‘গিবসন গার্ল’ থেকে নারীরা উদ্বুদ্ধ হয় সূক্ষ্ম প্রাকৃতিক ঠোঁটের প্রতি। এ সময়ে নারীরা আবারও ফিরে গেলো কারমাইনের প্রাকৃতিক রঙের দিকে। এটিকে আরও নমনীয় ও ব্যবহার উপযোগী করা যেত মোম আর তেল মিশিয়ে। এ যুগে কারমাইনের সিনথেটিক রেপ্লিকাও পাওয়া যেতো।
লিপস্টিকের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে রানী ক্লিওপেট্রার নাম। রানি ক্লিওপেট্রাও ঠোঁট রঙিন করতেন। ওই সময় অ্যালজিন, আয়োডিন ও ব্রোমিন মিশিয়ে লাল রঙ তৈরি হতো ফারাওদের দেশে। সেটিই ছিল তখনকার লিপস্টিক।
একই সময়ে এর ব্যবহার শুরু হয় মেসোপটেমিয়ায়। তারা ঠোঁটে মাখতেন রত্নপাথরে গুঁড়া। সুমেরীয় সভ্যতা থেকে মিশরীয় সভ্যতা, এরপর রোমান সভ্যতা-নারী-পুরুষ উভয়ই ঠোঁট রাঙাতে ব্যবহার করেছে বেরি বা জাম জাতীয় ফল, লাল সিসা, মাটি, মেহেদি, বিভিন্ন পোকামাকড়, গাছ-গাছড়া কিংবা বিভিন্ন খনিজ। তখন ঠোঁটের সুরক্ষায় ব্যবহার করা হতো এসব উপাদান।
লিপস্টিক এর উপকরনঃ
লিপস্টিক অনেক কিছু দিয়ে অনেক ভাবে বানানো হয়। প্রত্যেকটা লিপস্টিক আলাদা সুগন্ধের, রঙের জন্য আলাদা ভাবে তৈরি করা হয়। যেমন-
তেল: লিপস্টিকের ৬৫ শতাংশ হলো ক্যাস্টর অয়েলের মতো তেল। এই তেল ঠোঁটের জন্য ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ঠোঁটের জীবাণু ঠেকাতেও তেলের ভূমিকা রয়েছে।
মোম: লিপস্টিকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে মোম। লিপস্টিক তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের মোম ব্যবহার করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় কারনুবা নামের ব্রাজিলিয়ান মোম ও মৌচাকের মোম। কোপারনিসিয়া প্রুনিফেরা নামের একধরনের পামগাছ থেকে কারনুবা মোম পাওয়া যায়। একটি লিপস্টিকে মোমের পরিমাণ থাকে ২৫ শতাংশ।
ল্যানোলিন: ভেড়ার গায়ের ছেঁটে ফেলা লোম থেকে পাওয়া যায় এই বিশেষ ধরনের মোম। মূলত উলের তন্তু থেকে উল সরিয়ে নিয়ে এটি আলাদা করা হয়। ভেড়ার গায়ের লোম ছাড়াতে এটি অনেকটা পিচ্ছিলকারী পদার্থের মতো কাজ করে। যেমনটা মানবদেহে তেল ব্যবহারে দেখা যায়। গোটা লিপস্টিকের ৫ শতাংশ হলো এই ল্যানোলিন। ময়েশ্চারাইজার ছাড়াও লিপস্টিকে আঠালো ভাব আনতে সাহায্য করে এটি।
রং: একটি লিপস্টিককে আকর্ষণীয় করে তোলে এর রং। লিপস্টিকের ৫ শতাংশই হলো রং। প্রসাধনীর সারি সারি অসংখ্য লিপস্টিকের শেড সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। এসব শেড তৈরিতে ব্যবহার করা হয় অসংখ্য রং। টকটকে লাল লিপস্টিকে থাকে কারমিন নামের গাঢ় লাল রঙা একধরনের রঞ্জক পদার্থ। এটা পোকামাকড় চূর্ণ করে তৈরি করা হয়।
ক্যাপসাইসিন: উপাদানটি সব লিপস্টিকে থাকে না। ক্যাপসাইসিনের ‘প্লাম্পিং’ নামের বিশেষ ক্ষমতার কারণে কিছু কিছু লিপস্টিকে থাকে এটা। এর ঝাঁজালো বৈশিষ্ট্য ঠোঁটকে ফোলাতে কিংবা প্লাম্প করে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সাহায্য করে।
প্রাচীন গ্রীসে লিপস্টিক তৈরি করতে – ভেড়ার ঘাম, মানুষের লালা, কুমিরের বর্জ্য ইত্যাদি ব্যাবহার করা হতো।
নামকরনঃ
১৯৮০ সালে প্রথম লিপস্টিক নামে নামকরণ করা হয় ঠোঁট রঙিন করার এই প্রসাধনীকে। ১৯৮৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসের একটি সুগন্ধি তৈরির কোম্পানি প্রথম বানিজ্যিকভাবে এই লিপস্টিক বাজরে আনে।
তখন এই লিপস্টিক ধাতব কৌটায় পাওয়া যেত না। তরল বা ঘন রঙের লিপস্টিক কাগজে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যেত। ধাতব দন্ডে লিপস্টিকের আবির্ভাব ঘটে আরো পরে, ১৯১৫ সালে মরিস লেভির হাত ধরে। আধুনিক কালের এই লিপস্টিক তার হাত ধরেই অগ্রসর হয়। বর্তমানে আমরা যে লিপস্টিক চিনি, তার নাম ‘সুইভেল আপ’ লিপস্টিক।
বাধার সম্মুখিনঃ
লিপস্টিকের অগ্রগতির পথে নানা সময়ে এসেছে বাধা। একসময় গ্রিসে যৌন কর্মীদের এই রঙ ঠোঁটে ব্যাবহারের নির্দেশ ছিল। ঠোঁটের গাঢ় রঙই তাদেরকে শনাক্ত করার উপায় ছিল।
খ্রিস্টান ধর্মের নিয়মকানুন থেকেও লিপস্টিকের ব্যবহারে বাধা আসে। ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের সময়েও পুরুষদের মধ্যে লিপস্টিকের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। লিপস্টিকের জনপ্রিয়তার সত্ত্বেও ধর্মীয় দিক থেকে এটি কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এর ব্যাবহার জাদুবিদ্যার প্রসার, শয়তানের কাজ, যৌনকর্মীদের প্রসারের প্রতীক মনে করা হতো। পরবর্তীতে পোপের মাধ্যমে প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে নানা নীতিমালা আসে। এতে লিপস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ না হলেও লাল রঙের লিপস্টিক ব্যাবহার নিষিদ্ধ করা হয়, দেয়া হয় গোলাপি লিপস্টিক ব্যাবহারের অনুমতি।
পুনরায় ব্যাবহারঃ
তারপর রাণী প্রথম এলিজাবেথের সময়ে লিপস্টিক ব্যাবহার আবার কিছুটা বেড়ে যায়। রানী ঠোঁটে রঙ লাগানো খুবই পছন্দ করতেন। ফলে সাধারণ নারীরাও ধর্মীয় নির্দেশ অমান্য করে এই প্রসাধনী ব্যাবহারে আগ্রহী হয়।
ষোড়শ শতাব্দীতে রানী প্রথম এলিজাবেথের হাত ধরে লিপস্টিকের কিছুটা হাল বদল ঘটে। তিনি সাধারণত উজ্জ্বল গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পছন্দ করতেন। তবে এই সময়েও সর্ব সাধারণের জন্য লিপস্টিক ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। তখন কেবল উচ্চ শ্রেণির মহীয়সী নারী বা মঞ্চ অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের চল লক্ষ্য করা যায়।
ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের সময়ে নারী পুরুষ উভয়ের মাঝেই ব্যাপক ভাবে লিপস্টিক ব্যাবহারের প্রচলন ছিল। প্রধান কারন, থিয়েটারের আবির্ভাব।
তবে রাণী ভিক্টোরিয়ার সময়ে নারীবাদ ডানা মেলতে শুরু করে, তারা কী পরিধান করবে, কোথায় কাজ করবে, ভোটাধিকারসহ নানা বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে। একসময় লিপস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
বর্তমান দিনে যে লিপস্টিক গুলো ব্যাবহার করা হয় তা ১৯৫০ সালে আবিষ্কৃত হয় ।
বর্তমানে অনেক নামি-দামী ব্র্যান্ড লিপস্টিক তৈরি করে। আধুনিক প্রযুক্তি ও ফর্মুলায় তৈরি বিশ্বজুড়ে পরিচিত কিছু লিপস্টিক ব্র্যান্ড হলো – লরিয়েল, কালার পপ, ম্যাক, ওয়েট এন্ড ওয়াইল্ড, ইত্যাদি। এছাড়া ফ্রান্স, চিন, জার্মানিসহ নানা দেশ বর্তমানে সুলভ মূল্যে নানা রঙের লিপস্টিক উৎপাদন করছে।
স্কিন টোনের সাথে লিপস্টিকের শেডঃ
আপনার যদি ফর্সা ত্বক হয়, তাহলে আপনি গোলাপী, লাল বা নগ্ন শেড বেছে নিতে পারেন । আপনার যদি মাঝারি স্কিন টোন হয়, তাহলে আপনি বেরি, চেরি বা মাউভ শেড বেছে নিতে পারেন। একইভাবে, আপনার যদি ট্যান বা ডিপ স্কিন টোন থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই বাদামী শেড ব্যতীত গভীর গোলাপী, লাল এবং অন্যান্য রঙের সাথে যেতে হবে।
ফর্সা ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য- স্কিন টোন যদি ফর্সা ও উজ্জ্বল হয় তাহলে মেকআপের শেষে লিপকালার পিচ, হালকা গোলাপি, ন্যুড, কোরাল ও ডাস্টি রেড শেড ব্যবহার করুন।
মিডিয়াম টোনের জন্য– মিডিয়াম স্কিন টোনারের জন্য সঠিক লিপস্টিক কালারের জন্য আপনি এলিগেন্ট লুক আনতে মোভ, রোজ, চেরি রেড ও বেরি ব্যবহার করুন।
ট্যানড স্কিন টোনের জন্য- ট্যান ত্বক বর্তমান সময়ে বেশ ট্রেন্ডিং। এই টোনের জন্য ডিপ পিংক, রক কোরাল, ব্রাইট রেড বেশ মানানসই। এছাড়া পার্পল ও ব্রাউন লিপস্টিক শেড ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডিপ টোনের জন্য- পার্পলের যে কোনও শেড , ওয়াইন, ক্যারামেল, পাম ও ব্লু- বেসড রেড ও ব্রাউন রঙের লিপস্টিক এই ত্বকের ধরনের জন্য দারুণ মানানসই।
লিপস্টিকের ব্র্যান্ডঃ
- Perfect Pout
- Trapped In Xoxo
- The Perfect Lipstick
- Luscious Lipstick Luxe
- Perfectly Plump Lips.
- Bitten Berry
- Flawless Pucker
- Lip Addiction
- Lip Fantasies
- Seductive Shades
- Sultry Sable
- Lip Impact
- Mac lipstick
- Mrs& Miss
- Lipstick Vixen
- Soft Smooch.
- Red Sin
- Kissable Colors
- Pretty In Plum
- Lip Sensation
- Plumping Pout
- Fill Her Plump
- Divina
- So Much Drama
- Lip Luxury.
- Beautiful Thing
- Bright Pucker
- Blush Cosmetics
- Lip Primer.
- Purple Mocha Madness
- L’oreal Paris Color Riche Matte Lipstick
- Revlon Kiss Cushion Lip Tint Lipstick-220 Pink Lrl Rose Pour Vrai
- Milani Amore Matte Lip Creme 6g – 14 Devotion
- Wet n Wild Megalast Liquid Catsuit Matte Lipstick 6g – 925B Give Me Mocha
- Sleek Matte Me Ultra Smooth Matte Lip Cream- 433 Rioja Red
- Max Factor Marilyn Monroe Lipstick- Sunset Red
- Revlon Ultra HD Matte Lipcolor- 665 HD Intensity
- Maybelline Superstay Matte Ink Liquid Lipstick 5ml – 325
- Milani Amore Matte Lip Creme 6g – 11 Precious
- Absolute New York Matte Made In Heaven Liquid Lipstick & Liner Duo- MLIH07 Chai