নাম: সুখলতার ঘর নেই
লেখক: হরিশংকর জলদাশ
প্রকাশন : প্রথমা
হরিশংকর জলদাস (জন্ম: ০৩মে, ১৯৫৩) বাংলাদেশের একজন ঔপন্যাসিক। লিখেছেন অনেক উপন্যাস। জেলেদের জীবনের উপর তিনি উচ্চতর গবেষণা করেছেন এবং লিখেছেন একাধিক বই। ২০১১ সালে তিনি সৃজনশীল শাখায় প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
জীবন যেখানে সত্য সেখানে যুদ্ধ অনিবার্য । সে যুদ্ধ কখনো ক্ষমতার অথবা কামনার কিংবা আক্রোশের বা নিছক ক্ষুধা নিমিত্তের খাতিরে।তবে উপন্যাসের বর্নীত যুদ্ধ অন্যসব যুদ্ধের থেকে কিছুটা ভিন্ন কারণ যুদ্ধ এখানে স্থলের নয় বরং জলের।
মানুষের পরিবর্তে এখানে যুদ্ধ করে মাছেরা।তারাই এই গল্পের প্রধান ও মুখ্য চরিত্র।জলের গল্প হলেও এখানেও আছে প্রেম-বিরহ-ক্রোধ-কামনা।
মানুষের মতো তারাও বিবাদে জড়ায় আর তা সমাধানের জন্য আছে আইন ও সালিশ আর আছে কামনা আর ক্ষমতার লোভ৷ইলিশ কন্যা সুখলতার সাথে পাঙ্গাস রতিকান্তের বিয়ে নিয়েই বঙ্গোপসাগরের এই জলতল কেঁপে উঠে এক ভয়ানক যুদ্ধে।
পঞ্চু সরদারের কাছে এই যুদ্ধ ক্ষমতার আর তার দস্যু ছেলে জগার কাছে তা নিছকই কামনার তাড়না।অন্যদিকে আছেন সোমনাথ যার সুনাম ও সম্মান গোটা মৎসসমাজে।
সবাইকে ছাপিয়ে এ যুদ্ধের কেন্দ্রীয় বিন্দুতে শুধু একজন -জোছনাপ্রিয় ইলিশকন্যা সুখলতা।যেখানে ক্ষমতার আক্রোশে জলধারা কম্পিত ঠিক সেখানেই জলের উপরে ক্ষুধার্ত কয়েকটি জীবন নৌকার বুকে চড়ে বসে আছে কষ্ট নিবারণের আশায়………
সেই ক্ষুধা আর আক্রোশের যুদ্ধের শেষ হাসি কার ললাটে বিদ্ধ করেছেন লেখক?? হরিশংকর জলদাশ আমার মতে আন্ডারেটেড লেখকদের একজন। খুব অল্প পরিসরে তিনি লিখতে পারেন বিশাল কিছু।
উপন্যাসে মনুষ্য চরিত্রের পরিবর্তে তিনি মৎসকুলকে ব্যাবহার করেছেন জীবনের কঠিন সত্যকে উপস্থাপন করার লক্ষ্যে। শব্দের চয়ন আর লিখনশৈলীতে অনন্য একজন লেখকের যাদুতে মূহুর্তেই মৎসকূলের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম।
লেখকের লেখনীতে রতিকান্ত আর ইলিশকন্যা সুখলতাকে তাদের আসল পরিচয় এর থেকেও মাঝে মাঝে রক্তমাংসের মানুষ বলে মনে হয়েছে।
সল্প পরিসরের এই গল্পে যেখানে যুদ্ধই মূল উপজীব্য সেখানে মাছেদের সংঘাতকে আশ্রয় করে লেখক দেখিয়েছেন জীবনের অসহয়াত্ব এবং নির্মম বাস্তবতা।।
আমার রেটিং ৩.৫/৫
লিখেছেন – রাকিব আহমেদ