সেই প্রাচীনকাল থেকে নারীদের গয়না নিয়ে সৌন্দর্য পিপাসুরা লিখেছেন নানা রকমের কবিতা ও গান। পল্লী কবি জসীম উদ্দিন লিখেছিলেন,
‘রূপশালী ওই অঙ্গখানি, গয়না শাড়ীর ভাঁজে
আয়না খানা সামনে নিয়ে দেখছ কত সাজে।
সত্যি করে বল কন্যে! সবার যেমন লাগে
তোমার কাছে লাগে কি তার হাজার ভাগের ভাগে?
সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ও সাজে গয়নার প্রাধান্য হাজার বছর আগে ছিল, আজও আছে। শুধু পরিবর্তন এসেছে যুগের সঙ্গে মিলিয়ে এর রং, নকশা, ও উপাদানের। নিজের ভালোলাগা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয় গহনা। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের রুচি ও ফ্যাশানেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। সোনা, রুপা, হীরা, মুক্তা গহনার উপকরণ হিসেবে বেশ জনপ্রিয় বরাবরই দেখা যায় তবে কাঠের ও মাটির গয়নাও বেশ ফ্যাশনেবল। অনেকে হালকা গয়না পছন্দ করলেও ভারি গয়নাও অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
কিছু গয়নার খবর জানাচ্ছে কারুকর্ম ব্লগ –
নাক ফুলঃ
এখন নতুন করেই শুরু হয়েছে নাক ফুলের ব্যবহার। তরুণীরা বিভিন্ন পোশাকের সাথে মিলিয়ে ছোট বড় নাকফুল ব্যবহার করে থাকেছে। বিভিন্ন ধরনের নাকফুল এখন বাজারে পাওয়া যায়। আপনি যেকোনো পোশাক যেমন শাড়ি, কামিজ, ফতুয়া এবং টিশার্টের সাথেও নাকফুল পরতে পারেন। যারা ব্যাথার ভয়ে নাক ফোঁড়াতে চাননা তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের টিপ নাকফুল। নাকফুল নির্বাচনে যাদের নাক বড় ও খাড়া তারা ছোট নাকফুলের পাশাপাশি বড় নাকফুলও পরতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন ছোট নাক ফুলও। এগুলোর ডিজাইনে থাকছে জয়পুরি কাজ, ফুল, পাতা ও তারার আকৃতি এবং নকশা।
জ্যামিতিক ধাঁচের মাঝে আছে গোল, তিনকোনা কিংবা রেখার বিভিন্ন আকৃতি। শুধু নকশা নয়, কিছু নাকফুলে থাকছে রং ও পাথরের কারুকাজও। নাক ও মুখের আকৃতির সঙ্গে নাকফুলের সমীকরণ মেলাতে পারলেই আপনার চেহারার আভিজাত্য বদলানো সম্ভব।
নেকলেসঃ
নেকলেস বেশ পুরনো ঐতিহ্য বহন করে। জড়োয়া সেট, সীতা হারের মতো অলঙ্কারগুলো বহু বছর ধরেই খুব ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলুদের অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুণ ও বসন্ত উৎসবে বিভিন্ন ধাতুর গয়নার পাশাপাশি কাঠের, মাটির, কাপড়ের গয়নাও ব্যবহার করা হয়।
কানের দুলঃ
ফ্যাশনের জন্য অলংকার হিসেবে কানের দুল বিভিন্ন রকমের দেখা যায়। বর্তমানে মেটাল, বিডস, পিতল, বাঁশ, কাঠ, হাড়গোড়, মাটি, সুতা, ধাতু, পালক, নারকেলের মালা, ঝিনুক, শামুকের খোলাসহ নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব কানের দুলের নকশায় করা হচ্ছে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট। বর্তমান সময়ে কানের দুলের নকশাতে আদিবাসী থিমও চলছে বেশ। কানপাশা, মিনা করা ঝুমকা, নকশার ঝুমকা, মাকড়ি, কলকা, চুড়, ঘণ্টিসহ নানা ডিজাইন রয়েছে এসব কানের দুলে।তবে অন্যন্য অলংকারের চেয়ে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যেই চলতি ফ্যাশনে পরিবর্তনে এগিয়ে থাকে কানের দুল বা কানের অলংকার।
আংটিঃ
হাতের আঙ্গুলে ছোট অথবা বড় মাপের আংটি পড়ার রীতি বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কম বেশি রয়েছে। এখন চলছে কাঠ, পিতল, পুঁতি, মুক্তা, মিনা করা ও পাথরে নজরকাড়া নকশার বড় আংটি। এখন একটু বড় ও অসমান বা আঁকাবাঁকা আকৃতির আংটির চল এসেছে। কুর্তা বা ফতুয়ার সঙ্গে এ ধরনের আংটি বেশ মানিয়ে যায়। পরা যেতে পারে শাড়ি বা কামিজের সঙ্গেও।
ব্রেসলেটঃ
বাংলাদেশের হাল ফ্যাশনে চুড়ির রিনিঝিনি ছন্দ এখনো শেষ হয়নি। একটি সময় ছিল যখন মেয়েরা দুহাত ভরে কাঁচের চুড়ি পরতেন। কিন্তু বর্তমানে অনেকগুলো চুড়ির বদলে একটি দুটি চুড়ি পরার প্রবণতাই বেশি। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্তমানে মধ্যে চুড়ি পরার প্রবণতা তেমন একটা দেখা যায় না। আর সে জায়গাটা অনেকটাই দখল করেছে ব্রেসলেট। পুঁথির, মাটির, কাঠের, পিতলের, পাথরের, রুপার, সোনার, হীরার ব্রেসলেট বেশ জনপ্রিয়।
বাজুঃ
শতবছর আগে খুব বেশি ব্যবহৃত হতো হাতের বাজু। গায়ে হলুদ কিংবা বিয়ের দিন কনের বাহুতে বাজু পরার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। বাঙালির বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও তরুণীদের বাজু পরতে দেখা যায়। হাতা কাটা বা হাফহাতার যেকোনো পোশাকের সঙ্গে বাহুতে বাজু জড়িয়ে মেয়েরা যাচ্ছেন আচার-অনুষ্ঠান কিংবা কর্মস্থলে। শর্ট হাতার চেয়ে হাতা কাটা পোশাকেই বাজু উপযুক্ত। কেমন বাহুতে বাজু ভালো মানায়, সেটিও মাথায় রাখা উচিত। কামিজ, ফতুয়া ও টপসের সঙ্গে বাজু পরা যেতে পারে। অনেকে ফুল দিয়ে বাজু বানিয়ে পরে থাকেন।
আরো পড়ুন
- দেশের সব থেকে সুন্দর গ্রাম | পান্থুমাই ভ্রমণ
- কর কমিশনারের কার্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | Tax Commissioner Office Job Circular 2020
- পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | DGFP Job Circular 2020
- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | RAKUB Job Circular 2020
- বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি | BUET Govt Job Circular 2020
চুড়ি ও বালাঃ
বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। বিভিন্ন উৎসবে সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে চুড়ি। প্রতিটি বাঙালি নারীর প্রিয় অনুষঙ্গ এই রকমারি রঙ্গিন চুড়ি। মোটা একটি কিংবা দুটি বালাই যথেষ্ট হাত দুটিকে সাজিয়ে তুলতে। এক সময় সোনা বা রুপার বালার প্রচলন ছিল বেশি। বর্তমানে কাঠ, মেটাল, মাটি এবং সুতার বালাও প্লাস্টিকের বালা তরুণীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। অবশ্য সোনার বালার প্রচলন একেবারেই নেই, তা নয়। জমকালো পার্টিতে এখনো অনেকে সোনার বালা পরতে পছন্দ করেন। হোয়াইট গোল্ড কিংবা হীরা বসানো গর্জিয়াস বালা ঝলমলে ভাব এনে দেবে উৎসবে।
বিছাঃ কোমরের অলংকার হিসেবে বিছা হার বেশ সৌন্দর্যবর্ধক অলংকার। সত্তর বা আশির দশকেও বেশ জনপ্রিয় ছিল এ অলঙ্কারটি। তবে এখনও অভিজাত বা ফ্যাশনেবল করে তুলতে শাড়ি বা লেহেংগার সাথে কোমরে বিছা হার পড়া হয়। চেইন অথবা হার স্টাইলের বিছা বেশ জনপ্রিয়। সাপের মত বা বিছা পোকার মতো দেখতে এই বিছা পিতল, কাঁসা, রুপা, সোনা, কাঁচের পুঁতি বা ইমিটিশনের হয়ে থাকে।
পায়েল, খাড়ুঃ
আগে শুধু স্বর্ণ ও রুপা দিয়ে তৈরি হতো পায়েল। এখন পায়েল তৈরির নকশায় যেমন এসেছে বৈচিত্রতা তেমনি স্বর্ণ-রুপা ছাড়াও অ্যালুমিনিয়াম, কাঁচ, সুতা, কড়ি, কাঠ, প্লাস্টিক, পুঁতিসহ নানা ধরনের স্টোন দিয়েও তৈরি হচ্ছে বৈচিত্র্যময় পায়েল। রুপার ডিজাইনের মাঝখানে বড় স্টোন দেওয়া রিং ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গে ভালো মানায়। খাড়ু বানানো হতো সোনা, পিতল, তামা, রুপা, ব্রোঞ্জসহ বিভিন্ন একক ধাতুতে। এখন রুপা, তামা, ব্রোঞ্জসহ নানা রকম মিশ্র ধাতুতে তৈরি হচ্ছে খাড়ু। পুঁতি, সুতা আর কাপড় দিয়েও বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে খাড়ুতে। গোলাকার খাড়ুর একটা অংশে করা হয় নানা ধরনের ডিজাইন। যেমন—সাপের মাথা, সূর্য, টেরাকোটা, ময়ূর, নৌকা, পাতা, চাবি, ফুল ইত্যাদি। কখনো হুবহু আবার কখনো ধাতুর উপরি ভাগে আঁকা হয়। রং অ্যান্টিক, সোনালি, রুপালি, সিলভার, তামাটে ইত্যাদি। খাড়ু দেখতে অনেকটা হাতের বালার মতোই।
আদিবাসীদের গয়নাঃ
আদিবাসীরা খুব ভারি গয়না নিয়মিত ব্যবহার করে, যেমন- চুলের অলংকার চুল কারুক। নাকে পড়া হয় নাকফুল অথবা নজত্ত্র। আদিবাসীদের কানের অলংকার জুম্মুলি, আন্দিক, রাজ্জুর, হজফুল নামের। হাতের অলংকার বালা হারু, তাজ্জুর। তাদের গলার অলংকার গুলোর নাম টেঙ্গা ছড়া, আজুলি, আলছড়া। পায়ের অলংকার তাদের খুব প্রচলিত। যেমন- জলতরঙ্গ, ফুল হারু, সেজা হারু, ঠেংগত হারু ইত্যাদি পায়ে ব্যবহারের অলংকার।
