You are currently viewing বাল্য বিয়ে ভেঙে দিয়ে এসএ গেমসে ইতির স্বর্ণ জয়!

কতইবা বয়স হবে তখন? ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন ইতি খাতুন। পাড়ার সাথিদের সঙ্গে পুতুল খেলেই সময়টা কেটে যেত বেশ। আরও একটা খেলার প্রতি ভীষণ টান ছিল ইতির। তির-ধনুকের খেলায় এতটাই মজে গিয়েছিলেন যে মা–বাবার বকুনিকেও পরোয়া করতেন না। অনুশীলন শেষে একদিন বাড়িতে এসে দেখেন, বাবা তাঁকে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। পাত্রপক্ষ বসা বাড়ির বারান্দায়। বিয়ের সব আয়োজন শেষ।

শাড়ি পরে ঘোমটা মাথায় পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ান ইতি। পাত্রপক্ষের পছন্দও হয়ে যায় ‘বালিকা বধূকে’ দেখে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসেন ইতি। বিয়েটা আর হয়নি। বিয়ের আসর থেকে উঠে আসা মেয়েটাই এবারের দক্ষিণ এশিয়ান গেমস মাতাচ্ছেন। দুই বছর পর সেই কিশোরি দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে গিয়ে জিতে নিয়েছেন তিনটি সোনার পদক।

iti khatun
ইতি খাতুন

চুয়াডাঙ্গার দরিদ্র পরিবারে জন্ম ইতির। হোটেল কর্মচারী বাবা ইবাদত আলি তিন মেয়ের মধ্যে ইতিকে বিয়ে দেওয়ার সব প্রস্তুতিই সেরে নিয়েছিলেন। ইতিকে পছন্দ করেছিল বরপক্ষ। বিয়ের সব কথা পাকা হয়ে গেলেও ইতি খুঁজছিল মুক্তি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আর্চারির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের খবর পেয়েই চম্পট দেন দেন তিনি। তাতে প্রথমও হয়ে যান এই কিশোরি।

এরপরই বদলে গেছে ইতির জীবনের ছক। জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের আলোয় নিজেকে রাঙিয়ে এখন পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সাফল্য। যেখানে একটি সোনার পদক জিততেই অনেকের জেরবার অবস্থা, ইতি এনেছেন তিন সোনার পদক। নিজের এসব সাফল্য দিয়ে পরিবারের চিন্তার জগতও বদলে ফেলেছেন ইতি। এক সময় তাকে বাল্য বিয়ের চেষ্টা করা সেই পরিবারও ইতির সাফল্যে আলোকিত, গর্বিত, ‘একসময় আমার বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি রাজি ছিলাম না। তখন তারা বলতেন, মেয়ে হয়েছিস কিসের খেলা। তবে এখন আমাকে অনেক আদর করেন। আমার সাফল্যে তারাও গর্বিত।’



আরো পড়ুন



এসএ গেমসে এবার আর্চারিতেই এসেছে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। এই খেলার দশ ইভেন্টের মধ্যে সবগুলোতেই সোনার পদক জিতেছে বাংলাদেশ। আর্চারির হাত ধরে যেকোনো গেমসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সোনার পদক জেতার নিজেদের রেকর্ডও স্পর্শ করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

আর বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে অনেক আগেই একটা যুদ্ধে জিতে গেছেন ইতি। মাঠের লড়াইয়ে একের পর এক জিতে এবার নাম লেখালেন ইতিহাসে।

Leave a Reply