You are currently viewing যদি অলস, সাপ্লিখাওয়া ও ব্যাকবেঞ্চার হয়ে থাকেন তাহলে পরামর্শ গুলো চাকুরীর পরীক্ষার জন্য কাজে লাগবে – পর্ব ৩: দ্য ম্যাজিক বুক

প্রথমে একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। গ্রামের এক সহজসরল লোক তার দজ্জ্বাল বউয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ঠিক করলো, আর না, এবার সে পরিবার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে যাবে। সেই পরিকল্পনা মতো এক রাতে নদীর ঘাটে যেয়ে নৌকায় চড়ে বসলো। সারারাত স্রোতের বিপরীতে নৌকা চালালো।

সকাল বেলা দেখে নতুন এলাকাটা যেনো কেমন চেনা চেনা লাগে। গ্রামের এক মহিলা নদী থেকে পানি নিয়ে আসলো। তো সেই লোক সেই গ্রাম্য বধুকে জিজ্ঞেস করে “এটা কোন ঘাটগো মা”।

মহিলা তার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো “ওরে মিনসে, তুই এখানে, আর সারারাত আমি খুজে মরছি। এখন আবার বউকে মা ডাকা হচ্ছে। গাজা, ভাং খেয়েছিস নাকি সারারাত?”।

ততক্ষনে সেই লোক খেয়াল করলো, সে সারারাত নৌকা বেয়েছে ঠিকই, কিন্তু খুটির সাথে যে দড়ি দিয়ে নৌকা বাধা ছিলো সেটা খুলতেই তার মনে নেই।

যাকগে সেই বোকা লোকের কথা। আপনারা এখন বলুন আপনাদের কি কখনো এমন হয় নি, যে সারাদিন বই নিয়ে বসে আছেন। খাওয়া নাই, নাওয়া নাই কিন্তু দিন শেষে দেখা গেলো তেমন কিছুই পড়া হয় নাই।

ঘুরেফিরে কয়টা পাতাতেই আটকে আছেন? আসলে এমন হয় কারন আপনি বই নিয়ে বসে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু মনোযোগ ছিলো অন্যদিকে। যাদের এমন হয় তাদের জন্যই এই টিপস ‘দ্য ম্যাজিক বুক’। ম্যাজিক বুক কোন বই না।

এটা একটা খাতা। সেটা বানাবেন আপনি নিজেই এবং নিজের জন্যই। কেমন হবে সেই ম্যাজিক বুক কৌশল দেখে নিন।

১. প্রথমেই একটা খাতা বানাবেন। সেটা ভালো মানের হার্ডকাভারের নোট বুক হলেই ভালো হয়। সস্তা জিনিস হলে গুরুত্ব এমনিতেই কমে যাবে। নোট বুকের প্রথম পাতায় সুন্দর করে যে পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছেন সে পরীক্ষার নাম লিখেন।

২. তার পরের পৃষ্ঠায় যতগুলো সাবজেক্ট আছে, সবগুলোর নাম লিখেন। প্রতিটা সাবজেক্টের পাশে সে সাবজেক্টের যেসব বই কিনেছেন তার নাম লিখেন।

৩. তারপর যেকোন একটা পছন্দের সাবজেক্ট বাছাই করেন। পরের পৃষ্ঠায় সেই সাবজেক্টের নাম লিখে তার নিচে সেই সাবজেক্ট রিলেটেড গুরুত্বপূর্ন চ্যাপ্টার গুলোর নাম লিখেন।



আরো পড়ুন



৪. এবার আপনার আসল কাজ শুরু। প্রথমেই যেকোন একটা চ্যাপ্টার বাছাই করেন। বাছাই করে সে চ্যাপ্টারের কি কি টপিক আছে সেটার একটা লিস্ট তৈরী করেন।

লিস্টটা গুরুত্বপূর্ন। টপিক বড় হলে সেটাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নেন। যেমন: জাতিসংঘ টপিকটা বড়।

আপনি ভাগ করবেন এভাবে, জাতিসংঘ-১, জাতিসংঘ-২, জাতিসংঘ-৩। এমন ভাবে ভাগ করবেন যাতে একটা ভাগ/টপিক পড়তে বড়জোর ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে।

৫. এখন ঠিক করেন আপনি প্রতিদিন অন্তত ৫টা টপিক পড়বেন। শুরুতে ১০ মিনিট টপিকটা রিভিশন দিবেন। তার পরের ১০ মিনিটে ভালো করে বুঝার চেষ্টা করেন।

পরের ৫-১০ মিনিট আপনি সেই অংশটা ভালো করে রিভিশন দেন। এই পুরো ৩০ মিনিট হচ্ছে আপনার একটা লুপ। এই তিরিশ মিনিট অখন্ড মনযোগ দিতে হবে।

এই সময় অবশ্যই আপনি ক্যান্ডিক্রাশ, সিওসি, ফেসবুক, আইপিএল, সানি লিওন, গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড ইত্যাদি থেকে দূরে থাকবেন। ৩০ মিনিট শেষ হওয়ার পর অবশ্যই এই টপিকটা পড়া বন্ধ করবেন ও পরবর্তী টপিকে যাবেন।

৬. প্রতিটা টপিক পড়া শেষ হওয়ার পর লিস্টে সেটার পাশে বড় করে গোল কিরে চিহ্ন দিবেন। যখনই আপনার মনে হবে ধুর কিছুই তো পড়া হলো না তখনই সেই লিস্টের দিকে তাকাবেন।

সেই লিস্টের বড় বড় গোল করে দাগানো চিহ্নগুলোই আপনাকে মনে করিয়ে দিবে আপনার কিছু না কিছু পড়া হচ্ছে। প্রতিদিন ৫ টা করে টপিক পড়লেও তিরিশ দিনে আপনার ৫ গুন ৩০ = ১৫০ টা টপিক পড়া হবে। ১৫০ টা বিষয়ে জ্ঞান নেহাত ফেলনা নয়।

৭. শুরুতে যদি আপনি দৈনিক ৫ টা করে টপিক পড়ার অভ্যাস করতে পারেন দেখবেন আস্তে আস্তে সেই সংখ্যাটা বেড়ে ১০ এ চলে যাবে।

যখন আপনি দৈনিক ১০ টা করে টপিক পড়তে পারবেন তখন আপনি প্রতি মাসে ১০ গুন ৩০ = ৩০০ টা টপিক পড়বেন। চিন্তা করা যায় !!!

৮. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কথা প্রতিদিন একবার এই খাতাটাতে চোখ বুলাবেন। দেখবেন বিভিন্ন টপিকের পাশে গোলগোল চিহ্ন দেওয়ার একটা নেশা পেয়ে বসবে।

এটা একধরনের সেলফ মোটিভেশনের কাজ করবে।

Leave a Reply