সাধারণত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে না ।কিনত আজকাল প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অনেকসময় এটা গ্যাস পাইপে লিকেজের কারণে হয়। কখনো আবার অসাবধানতার কারণে হয়।
অনেকেই আছেন রান্না শেষে সরাসরি সিলিন্ডারের নব বন্ধ করেন কিন্তু গ্যাস বার্নারের নব বন্ধ করতে ভুলে যান বা করেন না। এতে গ্যাস ও সিলিন্ডার তাৎক্ষনিক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। সরাসরি সিলিন্ডারের নব বন্ধ করাতে গ্যাস বেরোনোর পথ হয়তো বন্ধ হয় কিন্তু বার্নারের ভিতরের গ্যাস হু হু করে বের হতে থাকে।
আবার কেউ কেউ আছেন বার্নারের নব বন্ধ করেন কিন্তু সিলিন্ডারের না। এটা থেকেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
রান্নার গ্যাস বাতাসের চেয়ে ভারি। ফলে গ্যাস লিক করলেও তা মেঝে ও বার্নারের মুখের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করে। এ কারণে এই সময় লাইটার কিংবা ম্যাচের কাঠি দিয়ে গ্যাস জ্বালাতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন লেগে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ কারণে রান্না শেষ হবার পর নিয়ম মেনে প্রথমে গ্যাস বার্নারের নব বন্ধ করুন। পরে করুন সিলিন্ডারের ।
গ্যাস সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। যেমন-
১. গ্যাসের নব ঠিকমতো বন্ধ করা হয়েছে কিনা তা দেখে রান্নাঘর থেকে বের হোন।
২. গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপে কোনও ধরনের ছিদ্র আছে কিনা সেটাও নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
৩. অনেকে গ্যাস ব্যবহারের পর লাইটার বা ম্যাচটি চুলার উপরেই রেখে দিন। এটা মোটেও উচিত নয়। চুলার থেকে নিরাপদ দুরত্বে রাখা উচিত ম্যাচ বা লাইটার।
৪. রান্নাঘরে ঢুকে গ্যাসের কোনও গন্ধ পেলে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বের হয়ে আসুন। ওই অবস্থায় কোনও সুইচ বোর্ড বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চালু করবেন না। গ্যাসের লাইনের কাউকে খবর দিন।
৫. গ্যাস বন্ধ করে বের হওয়ার আগে সিলিন্ডারের পাইপ যেন কোনও ভাবে গরম বার্নারের গায়ে লেগে না থাকে সেটা লক্ষ্য করুন।
৬. গ্যাসের পাইপ কখনও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করবেন না। পাইপ পরিষ্কার করতে শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন।খুব নোংরা হলে হালকা করে পানিতে ভিজিয়ে কাপড়টা ভালভাবে নিংড়ে সেই কাপড় ব্যবহার করুন। সাবানের ফেনা বা পানি কোনও ভাবে গ্যাসের সঙ্গে মিশে গেলে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে।
৭. গ্যাসের পাইপটির গায়ে বা সিলিন্ডারে ‘আইএসআই’ চিহ্ন আছে কিনা, তা দেখে নিতে ভুলবেন না। ‘আইএসআই’ চিহ্ন না থাকলে সেই সিলিন্ডার বা পাইপ অবিলম্বে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে ফেরত দিন।
৮. একই পাইপ বছরের পর বছর ব্যবহার করবেন না। নিরাপত্তার খাতিরে প্রতি ২-৩ বছর পর পর গ্যাসের পাইপ বদলে ফেলুন।
১০. পাইপ পরিষ্কার রাখতে অনেকেই গ্যাসের পাইপের গায়ে কোনও কাপড় বা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে রাখেন। এমনটা কখনওই করবেন না। কারণ, এ ক্ষেত্রে পাইপ থেকে গ্যাস লিক হলেও তা ধরা পড়বে না।
সিলিন্ডারের লিক পরীক্ষার নিয়ম :
সিলিন্ডারের গ্যাস বিস্ফোরণের ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে সিলিন্ডার লিক হচ্ছে কি না। এই পরীক্ষা করার জন্য পানিতে সাবানের গুঁড়া মিশিয়ে ফেনা তৈরি করুন। এই ফেনা রেগুলেটর, হোস পাইপ, ভাল্ব ইত্যাদিতে লাগান। যদি কোন স্থানে সাবান পানির ফোঁটা বড় হতে দেখা যায় তাহলে বুঝবেন ওই স্থানে লিক হয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
মূল কথা হলো সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার থাকে, সেই সিলিন্ডার ব্যবহারকারী, গ্যাস কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া, সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এবং অবশ্যই মানসম্মত গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডারের বিকল্প হিসেবে ইলেকট্রিক চুলাও ব্যবহার করা যেতে পারে।