You are currently viewing ফুচকার ইতিহাস | পানিপুরি বাংলাদেশে কিভাবে এলো ??

ফুচকা একটি অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু ভারতীয় উপমহাদেশর মুখরোচক খাদ্যবিশেষ।বাংলাদেশ এবং ভারতের শহরাঞ্চলে প্রায় সর্বত্রই এই খাদ্যটির প্রচলন রয়েছে। অঞ্চলভেদে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। গোটা বাংলাদেশে এর নাম “ফুচকা”; উত্তর ভারতে এটির পরিচিতি গোল-গাপ্পা হিসেবে , আবার পশ্চিম ভারতে, (যেমন মহারাষ্ট্রে), এই খাবারটির নামই পানি-পুরি

সাধারণত আটা এবং সুজি দ্বারা প্রস্তুত একটি গোলাকৃতি পাপড়ির মধ্যে মসলামিশ্রিত সেদ্ধ আলুর পুর ভরে তেঁতুলজল সহযোগে পরিবেশিত হয় এই ফুচকা। বিভিন্ন অঞ্চলে নানাবিধ নামধারণের পাশাপাশি ফুচকা পরিবেশনের রীতিটিও বিভিন্নতা লাভ করেছে। কোন কোন অঞ্চলে তেঁতুলজলের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় পুদিনামিশ্রিত জল। আবার পশ্চিমবঙ্গে ফুচকার পুর হিসেবে ব্যবহৃত আলুতে পেঁয়াজের প্রচলন না থাকলেও ভারতের ওড়িশা প্রদেশে পেঁয়াজ ফুচকার একটি অন্যতম উপকরণ। এছাড়া সমগ্র দেশেই দই-ফুচকা অর্থাৎ টকদই সহযোগে পরিবেশিত ফুচকা জনপ্রিয়তা প্রবল।

Bangla Recipe” জন্য কারুকর্ম ব্লগে রেগুলার চোখ রাখুন

ফুচকা এক সাম্যবাদী খাবার কারণ, গরিব থেকে বড়লোক, নারী থেকে পুরুষ, কিশোরী থেকে প্রৌঢ়া- সব ধরনের মানুষই এক সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে ফুচকা খেতে ভালবাসেন। সাধারণত আটা এবং সুজি দ্বারা তৈরি করা একটি গোলাকার ফাঁপা বলের ভেতরে আলু, মটরের পুর ভরে সেই বলকে টকঝাল তেঁতুল জল দিয়ে খেতে হয়। আহা! লিখতে গিয়ে আমার মুখের ভেতরটাও জলে ভরে গেল। শুধু ভারত বা বাংলাদেশ নয় পুরো উপমহাদেশেরই একটি বিখ্যাত জনপ্রিয় স্ন্যাকস এই ফুচকা। সম্প্রতি এক গবেষণায় ফুচকার ব্যাপারে মজাদার এক তথ্য উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, ফুচকার টেস্ট খুব দ্রুত মুখের টেস্ট বাডগুলোতে সঞ্চারিত হয়। তাতে মনখারাপও সহজেই ঠিক হয়ে যায়।

নামের বাহার

শতনাম আছে কি না জানি না, তবে অঞ্চলভেদে যে এর বেশ কয়েকটি নাম আছে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। গোলগাপ্পা, ফুলকি, টিক্কি, পানি কে বাতাসে, ফুচকা, গুপচুপ, বাতাসি, পাকাডা, পানিপুরি, পাকোরি- যে নামেই ডাকুন এই খাবার বাঙালির প্রাণের। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন, আমি জিভে জল আনা খাবার ফুচকার কথা বলছি। যদি জানতে চান যে ওইরকম নামকরণের কারণ কী? তাহলে কয়েকটি জেনে নিন-

  • গোলগাপ্পা নাম হওয়ার কারণ গোল একটা ফুচকাকে এক গাপ্পায় অর্থাৎ একেবারে মুখে পুরে নেওয়ার কারণে হয়েছে
  • ফুলন্ত মচমচে ফুচকার ভেতরে টক-ঝাল-মিষ্টি জল বা পানি দিয়ে খাওয়া হয় বলে নাম হয়েছে পানিপুরি। এই নামটিই খুব জনপ্রিয়
  • রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে পাতাসি নামে পরিচিত এ খাবারকে তামিলনাড়ুতে পানিপুরি বলে ডাকা হলেও পাকিস্তান, নয়াদিল্লি, জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও হিমাচল প্রদেশে এর নাম গোলগাপ্পা। তেলেঙ্গানা, ওড়িষা, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশের অনেক অঞ্চলে একে ডাকা হয় গুপচুপ নামে। তবে নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এ খাবার জনপ্রিয়তা ফুলকি নামে
  • ১৯৪৭ সালের আগে পর্যন্ত আজকের বাংলাদেশে ফুচকা ততা জনপ্রিয় ছিল না। তখন ওখানে একে সরাসরি ‘ঘটি’ জাতীয় খাবার বলে উপহাস করা হত। তবে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গের অনেকে বাংলাদেশে চলে এলে বাংলাদেশেও পানিপুরি তথা ফুচকা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে

রসনাগত ভিন্নতা

নামকরণের ভিন্নতার পাশাপাশি অঞ্চলভেদে এর পরিবেশনের পদ্ধতিতেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে মূল পার্থক্য থাকে এর পুর তৈরির উপকরণে। নানা জায়গায় আলুর পুর, সবজির পুর, সালাডের পুর, ঘুঘনির পুর কিংবা শুধু টকমিষ্টি জল ব্যবহার করা হয়। কোনও কোনও এলাকায় ঝালের পরিবর্তে মিষ্টিজাতীয় পুর ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সব ঠিক থাকলেও তেঁতুল জল না দিয়ে ধনে পাতার চাটনি, পুদিনা মেশানো জল, লেবু জল কিংবা মিষ্টি খেজুর জল দেওয়া হয়। আবার দই-ফুচকা বা টক দইসহযোগে পরিবেশিত ফুচকাও বেশ জনপ্রিয়। এতে পুরের মধ্যে নানা ছোলা, চানাচুর, মিষ্টি পাপড়ের সঙ্গে দেওয়া হয় বাদাম কুচি। তেঁতুল জলের বদলে থাকে টক-মিষ্টি দই।

উৎস

মনে করা হয়, পানিপুরি বা ফুচকা বা ফুলকির উদ্ভব হয়েছিল দক্ষিণ বিহারের মগধে। তবে এই নিয়ে বিতর্ক আছে। আছে কিংবদন্তিও।

কিংবদন্তি– ফুচকা নিয়ে চালু কিংবদন্তিটি এবারে জেনে নেওয়া যাক। মহাভারতের সময়কাল। দ্রৌপদীর তখন সদ্য বিয়ে হয়েছে। একদিন শাশুড়ি কুন্তী যাচাই করতে চাইলেন যে অল্প কিছু উপকরণ দিয়ে তাঁর পুত্রবধূ দ্রৌপদী কতটা ভাল খাবার বানাতে পারে। তাই তিনি একটু আলুর সবজি ও ময়দামাখা দিয়ে তাঁকে কিছু একটা বানাতে বলেন। সে সময় দ্রৌপদীফুচকা আবিষ্কার করেন। কুন্তী সেই ফুচকা খেয়ে এতটাই মোহিত হয়েছিলেন যে, সেই খাবারকে অমরত্ব প্রাপ্তির আশীর্বাদ করেন।ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জার্নাল অব ইন্ডিয়ায় ফুচকার বিশদ বিবরণ জানাতে গিয়ে এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে বারাণসীর কথা বলা হয়েছে। সে যাই হোক, বহু পুরনো এই খাবারকে শক্ত কুড়মুড়ে করে খাওয়ার প্রচলন শুরু হয় অনেক পরে। মোগলাই খানার সংস্পর্শে এসে এর গঠনগত আঙ্গিকের পরিবর্তন হয় বলেও মনে করা হয়।

লিখেছেন – কৌশিক রায়

Leave a Reply